টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের কিছু অংশে পানি উঠে গেছে। তবে উপজেলার হাওরগুলো এখনও পানিতে পরিপূর্ণ হয়নি। হাওরে পানি ঢোকার পথ কম থাকায় ধীরগতিতে হাওরে পানি ঢুকছে। এতে পানির প্রবল স্রোতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন নদীর পাড়ের মানুষজন।
নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার (৩০ মে) দুপুর ২টায় তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুর ব্রিজের পূর্ব পাশের অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানির ওপর দিয়েই সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মানুষ চলাচল করতে দেখা গেছে। এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। হাওরে পানি কম থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার যাদুকাটা, বৌলাই, পাটলাই ও রক্তি নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ২২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ২১৭ মিলিমিটার ও সুনামগঞ্জে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। হাওরে পানি প্রবেশের প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে তারা জানায়, উপজেলার ছোট বড় ২৩টি হাওরের মধ্যে হাওরে পানি প্রবেশের জন্য শনির হাওর ও মাটিয়ান হাওরে মাত্র দুইটি স্লুইসগেট রয়েছে। বাকিগুলোতে কোনো স্লুইসগেট নেই। তবে বাকি হাওরগুলোর নির্দিষ্ট বাঁধের একটি অংশ কেটে দেওয়া হয়।
আনোয়ারপুর বাজার সংলগ্ন দক্ষিণকুল গ্রামের কামরুল হাসান বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্রতি বছর সর্বপ্রথম আনোয়ারপুর ব্রিজের নিচের অংশ তলিয়ে যায়। এবারও এই অংশ তলিয়ে গেছে। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে কালকে সড়ক চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এবার হাওরে এখনও পরিপূর্ণ পানি প্রবেশ করেনি।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের চিকসা গ্রামের জামিল মিয়া বলেন, উপজেলার হাওরগুলোতে পানি প্রবেশ করার জন্য পর্যাপ্ত স্লুইসগেট বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে হাওরে ফসল উঠার পরে ঠিকমতো পানি প্রবেশ করানো সম্ভব হয় না। এতে হাওরের স্থায়ী বাঁধগুলো ঝুঁকিতে থাকে। পাশাপাশি নদীর পাড়ের বসতিরা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় থাকে।
মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক সাময়ুন কবির বলেন, প্রত্যেকটা হাওরে পানি প্রবেশ ও নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ স্লুইসগেট থাকা প্রয়োজন। এতে সঠিক পরিকল্পনা করে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে নদীর পানি বৃদ্ধিতে স্থায়ী বাঁধ ও বসতিদের ঝুঁকি কমে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, নদনদীর পানি বাড়লেও এখনও বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। আগামী ২-৩ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে, তবে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, হাওর পাড়ের নদীগুলো প্রস্থে কম হওয়ায় নদীর স্রোত বেশি। তাছাড়া হাওরের পানি প্রবেশের জন্য অনেক আগেই স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। যে হাওরে স্লুইসগেট নেই সেগুলোতে বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন