সামুদ্রিক মাছ আহরণে সরকারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের খোঁজে গভীর সমুদ্রে যাত্রা করেছেন উপকূলের হাজারো জেলে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে এমন রঙিন স্বপ্ন নিয়ে ইলিশের খোঁজে ছুটছেন তারা।
নীল জলরাশির বুকে এবার তারা পাড়ি দিচ্ছেন এক বুক স্বপ্ন নিয়ে। রুপালি ইলিশের খোঁজে বুধবার (১১ জুন) মধ্যরাত ও বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে মহিপুর-আলীপুর মৎস্য বন্দর থেকে শত শত ট্রলার ছেড়ে গেছে গভীর সমুদ্রের দিকে। আশানুরূপ ইলিশ পাবে এমনটাই প্রত্যাশা জেলেদের।
বন্দরের জেলে রুহুল মাঝি বলেন, সরকারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্রে মাছ শিকারের জন্য যাচ্ছি। আশা করছি, ভালো মাছ পাব।
দিদার মাঝি বলেন, আমরা সরকারের নিষেধাজ্ঞা শতভাগ পালন করেছি। আশা করছি, সমুদ্রে বেশ ভালো মাছ হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ পাব, ইনশাআল্লাহ।
জেলে করিম দফাদার বলেন, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞায় ধারদেনা করে চলেছি। সরকার যে চাল দিয়েছে, তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হয়নি। অবরোধ শেষে অনেক আশা নিয়ে সমুদ্রে যাচ্ছি। এখন সমুদ্রে নেমেও যদি ইলিশ না পাই, তাহলে বিপদ আরও বাড়বে।
মহিপুর মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি রাজু আহমেদ রাজা বলেন, আমরা শতভাগ সরকারের নিষেধাজ্ঞা পালন করেছি। তবে আমাদের পার্শ্ববর্তী জেলা বরগুনা, ভোলা, রামগতিসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অবরোধকালীন সময়ে প্রকাশ্যে মাছ শিকার ও বিক্রি হয়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে পালন না হওয়ায় জেলেরা বড় একটা লোকসানের সম্মুখীন হতে পারে। তবুও আশা নিয়ে ৫-৬ লাখ টাকার বাজার দিয়ে বোট সমুদ্রে পাঠিয়েছি। আল্লাহ সহায় হলে স্বপ্নপূরণ হবে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, এ বছর সরকারের অবরোধ সঠিকভাবে পালন হয়েছে। সামুদ্রিক ৪৭৫ প্রজাতির মাছ ভালোভাবে ডিম প্রজনন করতে পেরেছে। এ বছর সমুদ্রে মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আশা করছি উপকূলের জেলেরা এ বছর ভালো পরিমাণ মাছ পাবে।
উল্লেখ্য, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন নিশ্চিত করতে ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছিল সরকার। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সময়ের অসামঞ্জস্যতা এবং জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার সময় পরিবর্তন করে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়।
এই সময়ে সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় মাছ ধরা, পরিবহন, সংরক্ষণ ও বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে। আইন ভঙ্গকারীদের জেল ও জরিমানাও দেওয়া হয়েছে। জেলেসহ মৎস্য সংশ্লিষ্টদের আশা এবার সমুদ্রে ধরা পড়বে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ।
মন্তব্য করুন