গত কয়েকদিনের তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলাবাসীর জনজীবন। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও হিটস্ট্রোক রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশু রোগীও আছে। গত এক সপ্তাহে হঠাৎ করে গরম বৃদ্ধির কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়- ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও রোগী ভর্তি আছে ১০০ জনেরও বেশি। ঘর থেকে বারান্দা পর্যন্ত সিট না পেয়ে অনেক রোগী মেঝেতে জায়গা নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এর মধ্যে ডায়রিয়া ও জ্বরের রোগীও রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে ডায়রিয়া, জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। রোগীদের সেবা দিতে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স-মিডওয়াইফ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তরিকতার ঘাটতি না থাকলেও রোগী বেশি হওয়ায় মাঝেমধ্যে সামলাতে তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে এই উপজেলায় ডায়রিয়া, জ্বর, নিউমোনিয়া, পেটব্যথা ও হিটস্ট্রোক রোগীর প্রকোপ বেড়েছে। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ জন ডায়রিয়া রোগী, ৫৫-৬০ জন জ্বর, ৫-৭ জন নিউমোনিয়া ও ২-৪ জন হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী সেবা নিতে আসছেন। এর মধ্যে ঈদের পরের দিন থেকে গড়ে ১০ জন করে ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের আর্দ্রতা ৬০%।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেঝেতে ভর্তি হয়ে থাকা রোগী আইরিন বেগম বলেন, গতকাল হঠাৎ আমার বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি, বেড না থাকায় মেঝেতে বেড তৈরি করে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন বর্তমানে অনেকটাই সুস্থ।
আরেক রোগী মরিয়ম বিবি বলেন, তীব্র গরমে ভুট্টা শুকানোর কাজ করেছিলাম। হঠাৎ গতকাল থেকে আমার পেট ব্যাথা ও পাতলা পায়খানা। এরপর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্যালাইনসহ চিকিৎসা নিচ্ছি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া এক শিশুর অভিভাবক বলেন, গত দুই তিন দিন আগে আমার বাচ্চার শ্বাসকষ্ট সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন চিকিৎসা নিয়ে অনেকটাই সুস্থ।
সেবা নিতে আসা বাচোর গ্রামের হোসেন আলী জানান, ভ্যাপসা গরমে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। আমার ৩ বছর বয়সী মেয়ের হঠাৎ করে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থের পথে।
ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ধর্মগড় এলাকার কৃষক তোফায়েল হেসেন জানান, আমরা কর্মজীবী মানুষ কাজেই তীব্র গরমেও বাইরে কাজ করতে হয়। কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। জরুরি বিভাগে আসলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি, এখন সুস্থ, বাড়ি চলে যাবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ড ইনচার্জ জানান, বর্তমানে ওয়ার্ডে গড়ে প্রতিদিন ১০ জনের বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি থাকছেন। রোগীদের চাপ বাড়লেও সেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তাঁরা।
রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ চৌধুরী কালবেলাকে জানান, ৫০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি আছেন প্রায় শতাধিক রোগী। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেডের তুলনায় রোগী বেশি ভর্তি থাকলেও সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তীব্র গরমে হাসপাতালে বেশ কিছুদিন থেকে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। গরমের কারণে মা, শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়া রোগে ভুগছে বলে মনে করছি। তবে আমাদের হাসপাতালে ওষুধ ও স্যালাইন পর্যাপ্ত থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, এই গরমে ভাজাপোড়া খাবার কম খেতে হবে। খাবারের আগে সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধৌত করতে হবে। তীব্র গরমে বেশি বেশি পানি ও খাবার স্যালাইন খেতে হবে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে এসে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
মন্তব্য করুন