জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫, ০১:৫২ পিএম
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে মুহূর্তে বিলীন ১৯ স্থাপনা

পদ্মার ভয়াল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি ও দোকানপাট। ছবি : কালবেলা
পদ্মার ভয়াল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি ও দোকানপাট। ছবি : কালবেলা

শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা মাঝিরঘাট এলাকার পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ১৯টি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

সোমবার (৭ জুলাই) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করেই শুরু হয় ভয়াবহ ভাঙন। বিকেল ৪টার পর পরিস্থিতি এতটাই অবনতি হয় যে, একে একে বসতবাড়ি, দোকানপাট পদ্মায় তলিয়ে যেতে থাকে। মুহূর্তেই ভেঙে যায় মানুষের স্বপ্নের ঘরবাড়ি। আতঙ্ক আর হাহাকারে ভরে ওঠে পুরো মাঝিকান্দি-নাওডোবা এলাকা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভাঙনের তাণ্ডব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মাত্র কিছু সময়ের মধ্যে নদীতে হারিয়ে গেছে ছয়টি পরিবারে বসতবাড়ি এবং ১৩টি দোকানপাট। এর ফলে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি এবং ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামে অন্তত ৬০০ পরিবার এখন নদীভাঙনের সরাসরি হুমকিতে। আতঙ্কে অনেকেই রাতের অন্ধকারে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ও ব্যবসার মালপত্র নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল সেতুর পূর্ব পাশে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ রক্ষা বাঁধ। কিন্তু তার পরও গত বছর নভেম্বর, এ বছর ৮ জুন এবং সর্বশেষ সোমবারের ধসে তুলিয়ে গেছে বসতবাড়ি ও দোকানপাট।

স্থানীয়রা জানান, পদ্মার এমন ভয়াল রূপে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী। অনেকেই জীবনের শেষ সঞ্চয় দিয়ে গড়া ঘরবাড়ি আজ নদীতে হারিয়ে ফেলেছেন। চোখের সামনে গিলে নিচ্ছে সব কিছু স্মৃতি, স্বপ্ন, ইতিহাস। তাদের দাবি, অপেক্ষা না করে স্থায়ী ও টেকসই রক্ষা বাঁধ করতে হবে। না হয় পদ্মার থাবায় একদিন পুরো জাজিরাই হারিয়ে যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দুপুর ৩টা থেকে হঠাৎ বাঁধের মাটি সরে যেতে দেখি। এরপর একটার পর একটা দোকান, ঘরবাড়ি পদ্মায় বিলীন হতে থাকে। আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। এখন যদি স্থায়ী বাঁধ না হয়, তাহলে আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।

নাওডোবা কান্দি এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জলিল সরদার ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, কয়েক দিন ধরেই নদীতে তীব্র স্রোত। বাঁধের পেছনে ফাটল দেখা দিয়েছিল, আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম; কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। সেই অবহেলার ফলেই আজকের ভয়াবহ ভাঙন। এভাবে চললে পুরো গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে, সাহায্য দিতে ও ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করতে জরুরি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, আজকের ধস ২০০ মিটারের মতো হবে। ডাম্পিংয়ের পর এ ভাঙনটা হয়েছে। বিবিএ অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করেছিল। তবে আমরা জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাকসু নির্বাচন : মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় বাড়ল, পেছাবে ভোটের তারিখ

এসএ২০ লিগের নিলামে বাংলাদেশের ২৩ ক্রিকেটার

জবি বাংলা বিভাগের এক শিক্ষককে বহিষ্কার, ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা 

ছোট পর্দায় আসছে জনপ্রিয় তুর্কি সিরিজ ‘সুলতান আব্দুল হামিদ’

অবৈধ মোবাইল দিয়ে বন্দিরা আমাকে কল করেন : কারা মহাপরিদর্শক

বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি প্রযোজকের সিনেমা

শেখ হাসিনার সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে : শামা ওবায়েদ 

অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরি দিচ্ছে রকমারি ডটকম, বেতন ৩০ হাজার

জীবিকার তাগিদে বের হয়ে প্রাণ হারালেন রফিকুল

হঠাৎ অসুস্থ একই স্কুলের ২২ ছাত্রী

১০

কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে : সালাহউদ্দিন 

১১

দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোয় পরিবহনমন্ত্রীকে জরিমানা!

১২

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে হামলাকারীদের কী সাজা হতে পারে

১৩

গকসু নির্বাচন : প্রথম দিনে ১৩টি মনোনয়নপত্র বিতরণ

১৪

ববির আবেগঘন পোস্ট

১৫

খুলনায় নদী থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

১৬

প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত অডিট বন্ধ থাকবে : এনবিআর চেয়ারম্যান

১৭

১ বলে ১৩ রান নিলেন ভারতের তারকা ওপেনার

১৮

ডাকসু নির্বাচন / প্রচারণার প্রথম দিনই শিবিরের ব্যানার ভাঙচুর

১৯

হিজাব বিতর্কে ভিকারুননিসার সেই শিক্ষিকা বরখাস্ত

২০
X