কক্সবাজারে জুলাই পদযাত্রার সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর একটি বক্তব্যের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো কক্সবাজার। এর আগে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর এ বক্তব্যটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
সমাবেশে সঞ্চালনা করতে গিয়ে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, নারায়ণগঞ্জের এক সময়ের গডফাদার ছিল শামিম ওসমান, এখন নাকি নতুন গড ফাদার শিলং থেকে এসেছে। তিনি নাকি চিংড়ি ঘের, লবণ উৎপাদন ক্ষেত্র দখলে রেখেছেন।
এই বক্তব্যের পরপরই পুরো কক্সবাজার উত্তাল হয়ে ওঠে। বক্তব্যের সময় মঞ্চ লক্ষ্য করে এক প্রতিবাদী যুবক জুতো ছুড়ে মারেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) কক্সবাজার পাবলিক হল মাঠে এনসিপির পদযাত্রা শেষে সমাবেশে এ ঘটনাটি ঘটে।
কঠোর নিরাপত্তায় এনসিপির সমাবেশ শেষ হওয়ার পরপরই তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল বের করে কক্সবাজার জেলা ছাত্রদল। নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী কর্তৃক কক্সবাজারের সন্তান সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে তারা এ প্রতিবাদ মিছিল বের করে বলে জানান তারা। মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণকালে ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ একদল কর্মী পাবলিক হল মাঠের এনসিপির ব্যানার, ফেস্টুন খুলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মিছিল শেষে ছাত্রদলের এক সমাবেশে বক্তারা বলেন, কক্সবাজারের মৃত্তিকার শ্রেষ্ঠ সন্তান, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ একটি নাম, একটি ইতিহাস। দেশের জঞ্জাল দূরীকরণে, রাষ্ট্র সংস্কারে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি পতিত হাসিনার আয়নাঘর ফেরত এক লড়াকু। একজন জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের জাতীয় নেতার বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় কথা বলে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী জঘন্য অপরাধ করেছে। ডার্বি নাসীরকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
এদিকে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে সালাহউদ্দিন আহমেদের গ্রামের বাড়ি চকরিয়ার পেকুয়ায়।
সূত্র জানায়, নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর বক্তব্যের পর পূর্ব নির্ধারিত বান্দরবান যাওয়ার পথে ঈদগাঁও, চকরিয়া, লোহাগড়া, সাতকানিয়ার জুলাই পদযাত্রার পথসভা পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ, হাসনাত, ডা. তাসনিম জারা, নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীদের বহনকারী গাড়িবহরে নিরাপত্তা শংকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কক্সবাজারের চকরিয়ার হাঁসের দিঘী আর্মি ক্যাম্প এলাকায় দুই ঘণ্টা আটকে দেয়। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় সেনাবাহিনী কড়া নিরাপত্তা কর্ডনে চকরিয়া এলাকা পার করে দেয় তাদের।
এর আগে সপ্তাহখানেক আগে এনসিপি নেত্রী তাসনুভা জেরীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, সালাউদ্দিন আহমেদ ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ এনামুল হক বলেন, গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা ‘কেউ টাকা পায় তাই আত্মগোপনে চলে গেছে’। এমন ন্যক্কারজনক দাবি শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা করত। এনসিপির তাসনুভারা হাসিনার মতোই গুমের বৈধতা দিচ্ছে, তারাই আবার আওয়ামী লীগের বিচার চাচ্ছে। এই নতুন বন্দোবস্তের প্রবক্তাদের মানসিকতা কী রকম পশুর মতো হলে প্রতিপক্ষকে ঠেকানোর জন্য এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে।
তিনি বলেন, নাসীর পাটোয়ারী, জারারা আগামী নির্বাচন বানচাল করতে জাতীয় ভয়েস সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছে।
চকোরিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব এম মোবারক আলী বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন, কক্সবাজারের মাটি মানেই যে সালাউদ্দিন আহমেদের এটা ঠিকই জানে এনসিপির শিশু নেতারা। তারপরও উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে জনতার হাতে পিটুনি খাওয়ার জন্য। তারপর এটাকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে কিছুদিন এটেনশন পাবে তারা। দেশের জনগণ এসব বোঝে।
মন্তব্য করুন