চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক সালিশি বৈঠকে ফখরুল ইসলাম (৫৮) নামে এক বৃদ্ধাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়ালেও হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে ‘স্কুলে যাওয়ার সময় ছাত্রীকে তুলে নিয়ে বিয়ে, পরে সালিশি বৈঠকে ছাত্রীর বাবাকে পিটিয়ে হত্যা’। ঘটনাটি হাটহাজারী থানাধীন চসিক ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলি ওয়ার্ডের সন্দ্বীপ কলোনির পশ্চিম পাড়া আমতলী পাড়া শাহী জামে মসজিদের দক্ষিণ পাশে ঘটনাটি ঘটে।
ঘটনার সত্যতা জানতে রোববার (৩ আগস্ট) রাতে সরেজমিনে গেলে কথা কথা বলতে রাজি হননি ফখরুল ইসলামের পরিবার। তাদের ঘরে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া মাত্র তড়িঘড়ি করে সবাই ঘরের বাহির থেকে ভেতর ঢুকে যায়। ঘরের ভেতর সবাই থাকলেও তারা বলে ঘরে কেউ নেই। আমরা আপনাদের কোনো তথ্য দিতে পারব না। আপনারা চলে যান। এ সময় তাদের ঘরে বাইরে থেকে আসা কিছু মেহমান নাম ঠিকানা দিতে চাইলে তাদেরও বারণ করে দেয়। একপর্যায় সেই অতিথিদের ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
পরে স্থানীয় এমরান সওদাগর ও মোহাম্মদ বেলাল সওদাগরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফখরুল ইসলামের রুবি আক্তার নামে এক কন্যা ও রুবেল, রবিন এবং আরমান নামে তিন ছেলে সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে একই এলাকায় তাদের ঘরের পাশে খালার বাড়িতে আসা রিফাত ইসলাম নামে নোয়াখালীর এক ছেলের সঙ্গে ফখরুল ইসলামের কন্যা রুবি আক্তারের প্রেম হয়। এই প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে আদালতে গিয়ে তাদের বিয়ে হয়।
তারা আরও জানান, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে ছিল পরে মেয়ের পক্ষ এই সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় সামাজিকভাবে একটি সালিশি বৈঠক করা হয়। গত শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকালে সেই বৈঠক থেকে উভয়পক্ষের নমিনি নিয়ে মেয়ের ঘরে ঢুকতে মাথা ঘুরে পড়ে যায় রুবির বাবা ফখরুল। সেখান থেকে তাকে হাসপাতাল নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ফখরুল ইতিপূর্বে আরও দুইবার হার্ট অ্যাটাক করেছে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে কথা হয় প্রেমিক রিফাতের খালা শহর বানুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বোনের ছেলে রিফাত প্রায় তিন বছর ধরে আমার ঘরে থাকে। যখন যে কাজ পাই সেই কাজ করে। রুবির সঙ্গে রিফাতের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে তারা বিয়ে করে নোয়াখালী চলে যায়। দুই দিন পরে সেখান থেকে চলে আসে।’
তিনি জানান, রিফাতকে মারার জন্য রুবির পরিবার লোকজন ঠিক করে রাখে। কারণ তাদের বিয়ে রুবির পরিবার মেনে নিচ্ছে না। পরে সালিশি বৈঠক চলাকালীন হট্টগোল সৃষ্টি হয়। সেখানে মারামারির মতো চিৎকার চেঁচামেচি হয়। বৈঠকে সমাজের মানুষকে রিফাত সবকিছু বুঝিয়ে বলে। তারপর রুবিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য উভয়পক্ষের প্রতিনিধি রুবির ঘরে গেলে ফখরুল অসুস্থ হয়ে যায়। তাকে কেউ আঘাত করেনি। সে নিজেই মাথা ঘুরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাকে নিয়ে যখন সবাই হাসপাতাল যাচ্ছে তখন পথে তার মৃত্যু হয়। আমার মনে হয় সে হার্ট অ্যাটাক করেছে। সে আগেও দুইবার হার্ট অ্যাটাক করেছিলো।
শালিসের সময় আসলে কি ঘটেছিল জানতে সমাজের সর্দার সেক্রেটারি আবু বক্কর সওদাগরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রুবি আর রিফাতের মধ্যে আগে থেকেই প্রেম ছিল। পরে তারা আদালতে গিয়ে বিয়ে করে। তারা দুইজনই অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল তাই তাদের বিয়ে মেয়ে পক্ষ মেনে নিচ্ছে না। বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে রিফাত তার বন্ধুদের সহযোগিতায় রুবিকে চৌধুরীহাট নিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা আদালতে গিয়ে বিয়ে করে তার বন্ধুরাসহ নোয়াখালী চলে যায়। সেখান থেকে পুলিশ রুবিকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসেন। রুবি বর্তমানে তার বাবার বাড়িতে রয়েছে।
তিনি বলেন, এ বিষয় উভয়পক্ষকে নিয়ে একটি সালিশি বৈঠক করা হয়। বৈঠকে রিফাতের সব কথা শুনার পর রুবির মতামত নেওয়ার জন্য উভয়পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে আমরা রুবি ঘরের বাউন্ডারির ভিতর প্রবেশ করলে বাহির কিছু ছেলেপেলে হট্টগোল সৃষ্টি করে। আমরা গিয়ে থামানোর চেষ্টা করি। অনেক চেষ্টার পর দুপক্ষ দুইদিক চলে যায়। পরে রুবির ঘরে ঢুকতেই দেখলাম ফখরুলের অবস্থা খারাপ। তাকে নিয়ে হাসপাতাল যাওয়ার পথে সে মারা যায়। সে কেন মারা গেলো সেটা বুঝতে পারছি না। সামাজিক বৈঠকে কমপক্ষে শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিল বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, এরপরে তারা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করলে। তারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকায় আমরা সমাজের প্রতিনিধিরা মুচলেকা দিয়ে তাদেরকে নিয়ে আসি। আমরা চাই এই মামলায় সাধারণ মানুষ যেন হয়রানি না হয়। প্রকৃত যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে যেন আইনের আওতায় আনা হয়।
এ বিষয় জানতে চাইলে হাটহাজারী মডেল থানার উপপরিদর্শক (সেকেন্ড অফিসার) নাজমুল হাসান বলেন, হত্যা নাকি হার্ট অ্যাটাক সেটা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সন্দেহজনকভাবে দুইজনকে আটক করে আনা হয়েছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটা এখনো তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন