পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পিবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা পথে ছিলেন তারা যেন মৃত্যুর জন্যই রাস্তায় নেমেছিলেন। যারা মরতে চায় তাদের কেউ মারতে পারে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (০৫ আগস্ট) জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে পিবিপ্রবিতে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উদযাপন উপলক্ষে পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিবিপ্রবি) আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আকতার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম জুলাই অভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গকারী সব শহীদকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। তিনি বলেন, এমন কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ নেই, যারা এই আন্দোলন অংশগ্রহণ করেননি। কোনো ব্যানার ছাড়াই তারা অংশ নিয়েছে। এমনকি স্কুল-কলেজের ছোট ছোট বাচ্চারা যেভাবে আবাবিল পাখির মতো রাস্তায় নেমে এসেছিল তা ছিল অকল্পনীয়। সবাই যেন মৃত্যুর জন্য সেদিন রাস্তায় নেমেছিল। যারা মরতে চায় তাদের কেউ মারতে পারে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উপাচার্য বলেন, আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধসহ অন্তত ১,৪০০ ছাত্র-জনতা এই আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন। এমনকি ৫ আগস্ট যেদিন সরকার পদত্যাগ করে সেদিনও বিকেল ৩টার পর মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যে ৫২ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে বিবিসি বাংলার খবরে উঠে আসে। এ ছাড়া সাভারে ৬ জনকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। নিরীহ ও নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর এমন নির্মম ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ১৯৭১ সালকেও হার মানায়।
অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমরা ১৯৫২ সালে যুদ্ধ করেছি, ১৯৭১-এ করেছি, ১৯৯০ সালে করেছি, সর্বশেষ ২০২৪ সালে যুদ্ধ করে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা আর যুদ্ধ করতে চাই না। আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর ও নিরাপদ দেশ রেখে যেতে চাই। যে চেতনা নিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল সেই চেতনা আমরা সবাই ধারণ করব। সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে একটি দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠন করব। এটাই হোক জুলাইয়ের অঙ্গীকার।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন পিবিপ্রবির সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন, পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল আউয়াল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের চেয়ারম্যান ও ডেইলি অবজারভারের পিরোজপুর প্রতিনিধি জিয়াউল আহসান। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগের রিফাত হোসেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের মীম আক্তার, সিএসই বিভাগের মারুফ হোসেন ও গণিত বিভাগের শাদাব হাসিন বক্তব্য দেন।
বক্তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় ঐক্য ও সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ত্যাগের ফসল। এই আন্দোলন আমাদের অধিকার, কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছে। জুলাই আমাদের শিখিয়েছে যেখানে অন্যায় দেখব, সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে। এ ছাড়া তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন