জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলালের বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আব্দুল কাদের শেখ।
৯ আগস্ট এই অভিযোগ দাখিল করেন তিনি।
লিখিত অভিযোগে মেয়র কাদের বলেন, আমি মো. আব্দুল কাদের শেখ ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র। আমি পরপর টানা তিনবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সুনামের সঙ্গে পৌরসভাটি পরিচালনা করে আসছি। নিজেকে জনগণের খাদেম হিসেবে সাধারণ জনতার পাশে থেকে তাদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হয়ে জনতার কাজ করে আসছি। সাধারণ জনগণ আমাকে ভীষণ পছন্দ করে ও ভালোবাসে। তবে এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল ও বিএনপি সমর্থীত কিছু সংখ্যক কাউন্সিলরের ষড়যন্ত্রে সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হক খান দুলালের নির্দেশে বারবার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করে। স্থানীয় সরকার আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করলে আমি তার যথাযথ জবাব দাখিল করলে সংসদ সদস্য ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বারবার তদবির করেন আমাকে বরখান্ত করার জন্য।
লিখিত অভিযোগে তিনি আরও বলেন, গত পৌর নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা পর সংসদ সদস্য আমার মনোনয়নের বিরোধিতা করেন। তার বিরোধিতা করার পরও আমার জনপ্রিয়তা যাচাইবাছাই করে আমাকেই মনোনয়ন দেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। এ ছাড়া ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আমার বিরুদ্ধে বিরোধিতা করে আসছেন এবং আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর আলমকে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাড় করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী তার আস্থাভাজন কয়েকজন কাউন্সিল দিয়ে আমার বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি দখলের অভিযোগ এনে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১২ সালে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ে ইসলামপুর পৌর শহরের মূলকেন্দ্রে অবস্থিত বিজেএমসি একটি পরিত্যক্ত পাট ক্রয় কেন্দ্রের ঘরবাড়ি বিনষ্ট ও রাস্তার ওপর গাছপালা উপরে পড়ে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়, যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যে সম্পত্তি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তার প্রকৃত মালিক ছিলেন ভীমরাজ প্রণালি নামে এক ব্যক্তি। তিনি ১৯৬৩ সালে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদকে সম্পত্তি দান করেন। সেই সম্পত্তি আমার নামে নয়, পৌর সভার দখলে। এ ছাড়া ঝড়ে উপড়ে পড়া ঘরবাড়ির পরিত্যক্ত টিন ও গাছপালা চুরি যাওয়ার আশঙ্কায় পৌর গুদাম ঘরে সংরক্ষণ করা হয়। এ বিষয়টি নিয়ে সংসদ সদস্য ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিজেও অবগত হয়ে আমাকে বারবার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হায়রানি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এতে আমিসহ দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। শুধু তাই নয় তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন হাইব্রিড বিএনপি ও জামাতপন্থি লোক নিয়ে দল পরিচালনা করে আসছে বিধায় দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এর প্রভাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরতে পারে।
মেয়র কাদের শেখ জেলা আওয়ামী লীগের কাছে ন্যায়বিচার চেয়ে চিঠির বক্তব্য শেষ করেন।
এ বিষয়ে ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের শেখ জানান, আমি তিনবারের মেয়র। আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমি সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। সব মিলিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল আমাকে হেয় করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। আমি জেলা আওয়ামী লীগের কাছে ন্যায়বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ জানান, অভিযোগ পেয়েছি। সাংগঠনিকভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চলছে। আশা করি আমরা একটা সমঝোতামূলক সমাধান করতে পারব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল বলেন, ‘আমি কাউকে হিংসা করি না। আমি নিজের কাজে ব্যস্ত থাকি। আমি কেনো তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করব? প্রমাণ করুক তার বিরুদ্ধে আমি কিছু করেছি।’
এর আগে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল ও দুই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নালিশ করেন জামালপুর-শেরপুর সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হোসনে আরা। গত ১৮ আগস্ট এ-সংক্রান্ত পৃথক দুটি চিঠি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বরাবর পাঠান হোসনে আরা।
মন্তব্য করুন