স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারে ৩ দফা দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষেও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা শের-ই-বাংলা হাসপাতাল (শেবাচিম) পরিদর্শনে না আসায় লাগাতার বরিশাল ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা করেছে ছাত্র-জনতা। সোমবার (১১ আগস্ট) বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে টানা পাঁচ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ শেষে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।
এর আগে সাড়ে ৫ ঘণ্টা একই মহাসড়ক অবরোধ শেষে রোববার (১০ আগস্ট) বিকেলে ৪টায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরিশালে আসার আলটিমেটাম দিয়েছিল ছাত্র-জনতা।
আলটিমেটামে বলা হয়- নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেবাচিমে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে এসে তদন্ত শেষে সংস্কারের সুস্পষ্ট আশ্বাস দিতে হবে।
সোমবার বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দিন রনি বলেন, সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা, রোগীদের হয়রানি ও স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট ভাঙার দাবিতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি।
সবশেষ রোববার (১০ আগস্ট) ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে বলেছিলাম শেবাচিমে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে সশরীরে আসার জন্য। এসে অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত শেষে তিন দফা দাবির সপক্ষে সুস্পস্ট আশ্বাস প্রদানের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু আলটিমেটামের সময় শেষ হলেও তিনি বরিশাল আসেনি, তাই দাবি আদায়ে আমরা বরিশাল ব্লকেড কমৃসূচি ঘোষণা করেছি।
মহিউদ্দিন রনি আরও বলেন, বরিশালবাসীর আর্তনাদ এখনো মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পৌঁছায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক এখনো নড়ে না। যদি শেবাচিমে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ওপর দুর্নীতি, ভোগান্তি, অবহেলা চলতে থাকে, তাহলে এ আন্দোলন আরও কঠোর হবে।
এর আগে স্বাস্থ্যখাতের সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়াসহ ৩ দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশালের ছাত্র-জনতা। সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসটামির্নাল সংলগ্ন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা। এতে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
কুয়াকাটা থেকে আসা যানবাহনগুলো নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোডের চৌমাথা থেকে নবগ্রাম রোড দিয়ে কাশিপুর চৌমাথা দিকে ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। এতে যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে না থেকে বিকল্প পথে মহাসড়কে যুক্ত হয়ে গন্তব্যে চলে যায়।
একই পথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটাগামী গাড়িগুলো এ রুটে গন্তব্যে চলে যায়। এ পথে অতিরিক্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে হলেও ঘণ্টার ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে না। তবে অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণসহ যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছে।
এদিকে অবরোধ চলাকালে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে আন্দোলনকারীরা ইমার্জেন্সি লেন তৈরি করা হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে ছিল।
শেবাচিমে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমার মূল কাজ হলো হাসপাতালের সেবার মান বাড়ানো, রোগীকে সন্তুষ্ট করা, হাসপাতালটি আমাদের সবার। এ হাসপাতাল চালাতে সবার সহযোগীতা প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার চলমান আন্দোলন নিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য সহকারি উপদেষ্টা, সচিব ও ডিজি স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বরিশালের বিষয়ে অত্যন্ত পজেটিভ। বরিশালসহ সারাদেশে স্বাস্থ্য সংস্কার বিষয়ে কাজ করছেন তারা। তাদের সময় দিতে হবে।
তবে অচিরেই সারাদেশে ৩ হাজার চিকিৎসক ও আগামী মাসে ৩২শ নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের হাসপাতালে তুলনামূলক বেশি চিকিৎসক ও নার্স পাবে বলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। একইসঙ্গে খুবই দ্রুততার সঙ্গে আমাদের হাসপাতালের জন্য ১টি এমআরআই মেশিন, ক্যাথ ল্যাব ও সি-আম মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে। এজন্য বরিশালবাসীর কাছে তিন মাসের সময় প্রত্যাশা করেন তিনি।
গত ১৬ দিন ধরে তিন দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এই দাবিতে রোববার সাড়ে ৫ ঘণ্টা, শনিবার ছাত্রজনতা ও বাসশ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থানে গেলে ছাত্র-জনতা আড়াই ঘণ্টা ও বাসশ্রমিকরা দেড়ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে। এ ছাড়া শুক্রবার সাত ঘণ্টা, বৃহস্পতিবার আড়াই ঘণ্টা নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনালের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
মন্তব্য করুন