আতাউর রহমান, ব্রাহ্মণপাড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ১০:০১ এএম
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৪ এএম
অনলাইন সংস্করণ

এ যেন বক-পানকৌড়ির অভয়ারণ্য

কয়েকটি গাছে অসংখ্য সাদা বক ও পানকৌড়ির মিলেমিশে বসবাস। ছবি : কালবেলা
কয়েকটি গাছে অসংখ্য সাদা বক ও পানকৌড়ির মিলেমিশে বসবাস। ছবি : কালবেলা

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি গ্রামের হায়দর আলীর বাড়ি যেন পাখি বাড়িতে পরিণত হয়েছে। পাখিদের অভয়ারণ্য খ্যাত ওই বাড়ির পুকুর পাড়ের কড়ই ও তেঁতুল গাছসহ কয়েকটি গাছে অসংখ্য সাদা বক ও পানকৌড়ি কয়েকটি গাছে মিলেমিশে বাসা বেঁধেছে এবং মিলেমিশে বসবাস করছে। এ যেন প্রকৃতির দেওয়া এক চমকপ্রদ দৃশ্য।

একসঙ্গে এতো সাদা বক ও পানকৌড়ির এই মিলনমেলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মুগ্ধ করছে পাখিপ্রেমীসহ, পথচারী ও স্থানীয়দের। পাখিগুলোর ওড়াউড়ির অসম্ভব সুন্দর এই দৃশ্য বেশি দেখা যায় বিকেলে। এ সময় পাখিদের উচ্ছ্বাস ও কলতানে পরিবেশটাও বেশ আবেগময় হয়ে ওঠে। মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য উপভোগ করতে ভিড় করেন নানা বয়সী মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছর ধরে জুন মাসের শুরুতে বক ও পানকৌড়ি দলবেঁধে এসে গাছগুলোতে আশ্রয় নেয়। অক্টোবরের শেষের দিকে পাখিগুলো আবার কোথায় যেন চলে যায়। মাঝখানের সময়টাতে পাখিগুলো এখানে মিলেমিশে বসবাস করে। সারাদিন পাখিগুলো খাদ্যের সন্ধানে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করলেও দিন শেষে বিকেলে এদের ওড়াউড়ি ও ডাকাডাকিতে ওই বাড়ির আশপাশ বেশ মুখরিত হয়ে ওঠে। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে এখানে বিশেষ করে বিকেলে অনেকেই আসেন। তবে পাখিগুলোর যেন কোনো অসুবিধে না হয় বা কোনো শিকারি যেন তাদের শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে হায়দর আলীর বাড়ির পুকুর পাড়ে দেখা গেছে, পুকুর পাড়ের বিশালাকৃতির রেন্ডি কড়ই ও তেঁতুল গাছসহ আরও কয়েকটি গাছ ঘিরে অসংখ্য সাদা বক ও পানকৌড়ি ওড়াউড়ি ও ডাকাডাকি করছে। গাছের ফাঁকফোকরেও বসে আছে সাদা বক ও পানকৌড়ি। মা পাখি খাবার সংগ্রহ করে এনে ছানাদের খাওয়াচ্ছে। এক পাখি অন্য পাখির সাথে খুনসুটি করছে। এ দৃশ্য যেন যে কাউকে আপ্লুত করার মতো মনোমুগ্ধকর। এই চমৎকার দৃশ্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন পথচারীরা। পাখিদের ওড়াউড়ির দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করছেন পাখিপ্রেমীরা। এক সঙ্গে এতো বক ও পানকৌড়ি মিলেমিশে বসবাস করার দৃশ্য নজর কাড়ছে পাখিপ্রেমী ও স্থানীয়দেরও।

হায়দর আলীর বাড়ির বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগে থেকে বক ও পানকৌড়ি আমাদের বাড়ির পুকুর পাড়ের কয়েকটি গাছে বসবাস শুরু করে। এরা বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এখানে বসবাস করে, পরে আবার কোথায় যেন চলে যায়। আবার বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পাখিগুলো ফিরে আসে। অতিথি এ পাখিগুলোর দিকে আমাদের নজরদারি রয়েছে। কোনো শিকারি যেন এদের শিকার করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি।

একই বাড়ির বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, সকাল-বিকাল বক ও পানকৌড়ির উড়াউড়ি ও চেঁচামেচি আমাদের বাড়ির আশপাশকে মাতিয়ে রাখে। কয়েক বছরে পাখিগুলোর প্রতি আমাদের এক ধরনের মায়া জন্মে গেছে। যখন প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ের পর পাখিগুলো চলে যায় তখন আমাদের খুব খারাপ লাগে। এদের অনুপস্থিতি আমাদের খুব কষ্ট দেয়। কয়েক বছর ধরে পাখিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমরা পালন করছি। শিকারিদের কাছ থেকে এদের সুরক্ষা দিতে আমরা সবসময় নজর রাখছি।

পাখিদের নিয়ে কথা হয় ওই এলাকার প্রকৃতি ও পাখিপ্রেমী ও সাবেক স্কুলশিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, অতিথি এ পাখিগুলোর যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। এরা জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝের দিকে ওই বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ের গাছগুলোতে এসে বাসা বাঁধে। একসঙ্গে এতো পাখির বসবাসের চিত্র সকলকে আপ্লুত করে।

তিনি আরও বলেন, পাখিগুলো প্রজননের প্রয়োজনে এখানে আসে। পাখিরা ডিম পারে এবং ডিম থেকে বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চাগুলো উড়তে শিখে গেলে এরা এদের বাসা ভেঙে ফেলে। এরপর এরা আবারও বাসা বাঁধে ও দ্বিতীয় দফায় ডিম পারে এবং ডিম থেকে বাচ্চা ফোটায়। এবার বাচ্চাগুলো উড়তে শিখে গেলে এরা কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে চলে যায়।

সাবেক এ স্কুলশিক্ষক বলেন, দিন দিন বনাঞ্চল সংকুচিত হওয়ার কারণে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বিভিন্ন জাতের পাখি দিন দিন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এতে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্যও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা জাহান কালবেলাকে বলেন, আমি শুনেছি উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকার একটি বাড়ির পাশের পুকুরের পাড়ে বক ও পানকৌড়ির অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে। এটা প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য আশাব্যঞ্জক। প্রকৃতি পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল হয়ে উঠুক। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনও কাজ করছে। বৃক্ষ রোপণ অভিযান অব্যাহত আছে। প্রকৃতির যত প্রসার ঘটবে ততই পাখিদের অভয়ারণ্য বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘভূমি এলাকায় আশ্রয় নেওয়া পাখিগুলো যেন কোনো শিকারির শিকারে পরিণত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ সমুদ্রবন্দরকে সতর্কসংকেত, ঝড়ের আশঙ্কা

রেখার সঙ্গে পরকীয়া, প্রেম ভাঙে অক্ষয়-রাভিনার

বিশ্বের সবচেয়ে ‘দয়ালু বিচারক’ ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন

রাশিয়ার তেল কেনায় ভারত শাস্তি পেল, চীন পেল না কেন?

সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিলেন সারওয়ার আলম

টিউমারের ভারে থমকে আছে শিশু মুকাব্বিরের দুরন্তপনা

১০ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার

নিখোঁজ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা উদ্ধার

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত মাহবুবুল আনামের

চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা

১০

এবার কোথায় বসবেন তারা

১১

খাবার প্লেটের আকারের সঙ্গে স্বাস্থ্যের কী সম্পর্ক রয়েছে

১২

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন ১৭৫ বাংলাদেশি

১৩

কাঁচামরিচের কেজি ৩০০ টাকা ছাড়াল

১৪

বিপিএল খেলা তারকা ক্রিকেটার প্রথমবার নাম লেখালেন সিপিএলে

১৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রিভিউ শুনানি দ্রুত করতে সব রাজনৈতিক দলের আবেদন

১৬

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

১৭

নেতানিয়াহুর ‘দুর্বল’ মন্তব্যের শক্তিশালী জবাব দিল অস্ট্রেলিয়া

১৮

এ যেন বক-পানকৌড়ির অভয়ারণ্য

১৯

সিপিএলে ব্যাট হাতে সাকিব ব্যর্থ হলেও জয় পেয়েছে দল

২০
X