আতাউর রহমান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঔষধি উদ্ভিদ বন টেপারি

ঔষধি গাছ বন টেপারি। ছবি : কালবেলা
ঔষধি গাছ বন টেপারি। ছবি : কালবেলা

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রকৃতির ভূমিকা অপরিসীম। আধুনিকায়নের ফলে দিন দিন পরিবেশ থেকে প্রকৃতির উপস্থিতি হ্রাস পাচ্ছে। এতে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মহামূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ নানা গুণের ঔষধি গাছ।

এমনই এক মূল্যবান ঔষধি উদ্ভিদ বন টেপারি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে হুমকিতে পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্য। দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে মানবকল্যাণে ব্যবহার হয়ে আসা গাছগাছালির মাধ্যমে দেওয়া চিকিৎসাব্যবস্থা। ক্ষীণ হয়ে আসছে ভেষজ চিকিৎসার সম্ভাবনা।

জানা গেছে, ঔষধি গুণে ভরা বন টেপারি গাছ বর্ষজীবী সপুষ্পক বিরুৎ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিজালিস মিনিমা। এর ইংরেজি নেটিভ গুজবেরি। এটি সোলানাসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি পটকা নামেও বেশ পরিচিত। এটি ২০ থেকে ২৫ সেমি পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। এর ফল দেখতে অনেকটা জাপানি লণ্ঠনের মতো। এ ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ হয়, তবে পরিপক্ব হলে এর রং লাল বা বাদামি হয়। এর ফল চীন দেশে সালাদে ব্যবহার করা হয়। স্বাদ টক ও সুস্বাদু। আকৃতিগত সাদৃশ্যের কারণে এটিকে চাইনিজ ল্যান্টার্ন বলা হয়ে থাকে। এ উদ্ভিদ বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে থাকে। এটি সাধারণত রাস্তার পাশে, জমির আইলে, জলাশয়ের পাড়ে, পতিত জমি ও বনাঞ্চলে জন্মায়। এর ব্যাপক ভেষজ গুণ রয়েছে।

ইউনানি চিকিৎসকরা জানান, ডায়রিয়া নিরাময়ে, দাঁত ব্যথায়, হৃদ্‌রোগে, ত্বকের সমস্যায়, জ্বর উপশমে এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এটি শরীরের ফোলাভাব, পেটের বদহজমজনিত সমস্যায় এবং কৃমি নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও এই উদ্ভিদ ব্যবহার করে মানবদেহের নানা রোগ নিরাময় করা হয়।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা মন্তাজ আলী বলেন, একসময় অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনকার মতো এতটা সহজলভ্য ছিল না। সে সময় দেখেছি আমাদের মা-চাচিরা নানারকম গাছগাছালির মাধ্যমেই অসুখ-বিসুখ সারিয়ে তুলতো। তবে আমরা ছোটবেলায় যত রকম ঔষধি গাছ দেখেছি এখন আর এতটা চোখে পড়ে না।

স্থানীয় আরেক প্রবীণ বাসিন্দা মো. তমিজ উদ্দিন বলেন, এখনকার মানুষজন গাছগাছালির চিকিৎসার প্রতি আগ্রহী নয়। এখন সবাই অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আর এ জন্য দিন দিন আমাদের প্রকৃতি ছোট হয়ে আসছে। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে উপকারী গাছ।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রকৃতি পরিবেশের হৃৎপিণ্ড। প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর প্রভাব সরাসরি পরিবেশের ওপর পড়ে। এ জন্য প্রকৃতি রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রকৃতি থেকে বন টেপারির মতো মূল্যবান বহু ঔষধি গাছ দিন দিন সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে। এসব বিষয় আমাদেরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, প্রকৃতির প্রতি আমাদের অবহেলার কারণে দিন দিন প্রাচীন চিকিৎসাব্যবস্থা সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান ঔষধি গাছ। প্রকৃতি থেকে পাওয়া ঔষধি গাছ রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বন টেপারি একটি ঔষধি গাছ। এ গাছের বিভিন্ন অংশ মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। বন টেপারির মতো মূল্যবান ঔষধি গাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে ও প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থার সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাতসকালে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে অভিভাবকদের মানববন্ধন

খাগড়াছড়িতে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

প্রচণ্ড মাথাব্যথা দূর করতে যা করবেন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন

রাউটার চালালে মাসে কত টাকা বিদ্যুৎ খরচ হয় জেনে নিন

বন্ধ করা হলো কাপ্তাই বাঁধের ১৬ জলকপাট

হাসপাতাল থেকে আজ বাসায় ফিরবেন জামায়াত আমির

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যে ৫ সমঝোতা স্মারক

সময় না থাকলেও পুরুষদের জন্য কেন ব্যায়াম করা জরুরি

নিউটনের সূত্র ভুল দাবি করলেন পঞ্চগড়ের আফসার

১০

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১১

আজ আন্তর্জাতিক যুব দিবস

১২

১২ আগস্ট : আজকের রাশিফলে কী আছে জেনে নিন

১৩

জেলেনস্কিকে মোদির ফোন, যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা

১৪

কারও শরীরে পা লাগলে হাত ‍দিয়ে ছুঁয়ে সালাম করা কি জায়েজ?

১৫

সাংবাদিক তুহিনের ময়নাতদন্ত : গলা, বুক ও পিঠে ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন

১৬

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

১৭

ফিলিস্তিনের পক্ষে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বড় সিদ্ধান্ত, সৌদির প্রতিক্রিয়া

১৮

আলাস্কায় হতে পারে ইউক্রেন ভাগাভাগি, দানা বাঁধছে সন্দেহ

১৯

কেমন থাকবে আজ ঢাকার আবহাওয়া

২০
X