ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলাধীন মাতুভুঞা ইউনিয়নের শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ করিম উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়টি এবার নদীভাঙনে বিলীন হতে চলেছে। এরই মধ্যে একটি স্কুলের একটি কক্ষ পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এদিকে ভাঙন অব্যাহত থাকায় পাশের স্কুল মাঠ, শহীদ মিনার হুমকির মুখে রয়েছে। যে কোনো সময় পুরো স্কুলটি নদীতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সরেজমিন দেখা যায়, ১৯৫১ সালে স্থানীয় বাসিন্দা রহিম উল্যাহ চৌধুরী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিপাত ও ভেঙে যাওয়া মুছাপুর ক্লোজার দিয়ে জোয়ারের পানি উঠে ছোট ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবনের নিচ থেকে সরে গেছে মাটি। ভবনটির উত্তর পাশের অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ভবনের পাশে লাগোয়া শহীদ মিনারের বিভিন্ন অংশেও ফাটল দেখা দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেরিনা সুলতানা বলে, ভবনটিতে আমাদের দশম শ্রেণির গ্রুপ বিষয়গুলোর পাঠদান চলে। কখন পুরো ভবন নদীতে তলিয়ে যায়, তা নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। বিদ্যালয়ের ভবনটি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমি প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী বিশিষ্ট সমাজসেবক জহিরুল কাইয়ুম রাহাত জানান, নদীভাঙনের ফলে স্কুলের পুরো ভবন ধসে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শতবর্ষের কাছাকাছি ওই প্রতিষ্ঠানকে কোনোভাবে বিলীন হতে দেওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্টদের এখনই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হারিছ আহমদ পেয়ার জানান, বিদ্যালয়টিতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। যদি স্কুলটি নদীর পানিতে তলিয়ে যায় তাহলে তাদের পড়ালেখার বিঘ্ন ঘটবে। প্রশাসনের উচিত এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া।
করিম উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম বাছির ভূঞা বলেন, নদীভাঙনে আমাদের স্কুলটি বিলীন হতে চলেছে। এটি একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। ভবনটিতে লাইব্রেরি, নামাজের কক্ষ ও দুটো শ্রেণিকক্ষ ছিল। যদি ভবনটি বিলীন হয়ে যায় তাহলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটবে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মাঈন উদ্দিন আজাদ বলেন, বর্তমানে ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদীর তীরে ভাঙনরোধে টেকসই কাজ করা জরুরি। অন্যথায় পানির স্রোতে যে কোনো সময় ভবন ধসে পড়বে। এরই মধ্যে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনটিতে পাঠদান করা সম্ভব নয়, তাই পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা কামনা করছি। আমি নিজেই এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীলদের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, তারা এ বিষয়ে দ্রুত বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নদীভাঙনের কারণে ভবনের একটি অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সেখানে পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফুয়াদ হাসান বলেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান সরেজমিন দেখে এসেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে, শিগগির কাজ শুরু হবে। তখন নদীভাঙন রোধ করা যাবে।
এ বিষয়ে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহীদুল ইসলাম বলেন, ভাঙন থেকে বিদ্যালয়ের ভবনটি রক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বিষয়ে কাজ করছে।
মন্তব্য করুন