কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান নয়ন।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মেনশন করে জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি।
ফেসবুকে নয়ন লিখেছেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন কমিটির মাধ্যমে জেলা ছাত্রলীগের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ভাইকে অনুরোধ করব আপনারা কিশোরগঞ্জ এসে সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের নতুন কমিটি উপহার দিবেন।’
এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর নয়ন লিখেছেন, ‘অভিভাবকহীন কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ, মামা-ভাগ্নে মিলে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে তাদের চরিত্রের পাশাপাশি সংগঠনের চরিত্রকে নিলামে তুলে দিচ্ছে।’ ফেসবুকে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক মন্তব্য করে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ।
বাজিতপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ এজাজুল ইসলাম লিখেছেন, ‘অনেক শখ করে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের আওতাধীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজর সামনে থেকে দেখতে চেয়েছিলাম। আমাদের কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের জন্য এটা হলো না, ওনারা আসছেই প্রোগ্রাম শেষে। আমাদের কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটির ব্যর্থতা এটা। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন কমিটি দিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করার জন্য আকুল আবেদন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ভাই এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান ভাইয়ের কাছে।’
কেউ কেউ লিখেছেন, ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করে নতুন প্রগতিশীল নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই।’
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান নয়ন বলেন, ‘২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তৎকালীন সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বাক্ষরিত তিন সদস্যের একটি কমিটি প্রকাশ করে। ওই কমিটিতে আনোয়ার হোসেন মোল্লাকে সভাপতি, মোহাম্মদ ফয়েজ উমান খানকে সাধারণ সম্পাদক ও লুৎফর রহমান নয়ন (নিজ) সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটি এক বছরের জন্য অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেখানে নির্দেশনা ছিল এক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। বর্তমানে ওই কমিটির মেয়াদ সাড়ে তিন বছরেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এখন পর্যন্ত কোনো কর্মী সমাবেশ বা বর্ধিত সভা করতে পারেনি। সকল উপজেলায় ও ইউনিটে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সামনে সংসদ নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলে আসছেন ছাত্রলীগের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান কমিটির এমন কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আমি লুৎফর রহমান নয়ন সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে এই দায় এড়াতে পারি না। আর সেই কারণেই কমিটি বিলুপ্ত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দিয়েছি।’
নয়ন আরও বলেন, ‘বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ভাই লীগ নিয়ে ব্যস্ত, এইটা পকেট কমিটি অনুমোদিত হয়েছে। সংগঠনের কোনো কার্যক্রম নেই। আগামী সংসদ নির্বাচনে এই কমিটি দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব না। কারণ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীরা তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানানো হয়েছে। আশা করছি জেলা, উপজেলাসহ প্রতিটি ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সংগঠনের কেউ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সাংগঠনিকভাবে এমন কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াতে পারে কি না এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে কথা বলা হবে।’
মন্তব্য করুন