টাঙ্গাইলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর বাসভবনে হামলা হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে টাঙ্গাইল পৌর এলাকায় জেলা সদর রোডে কাদের সিদ্দিকীর বাসভবন ‘সোনার বাংলা’য় হামলা ও ভাঙচুর চালায় একদল দুর্বৃত্ত।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে কাদের সিদ্দিকী নিজেই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কাদের সিদ্দিকীর গাড়িচালক লিটন বলেন, ‘গভীর রাতে হঠাৎ ঘুমের মধ্যে ভাঙচুরের শব্দে জেগে উঠি। দেখতে পাই— অস্ত্র হাতে ১০ থেকে ১২ সন্ত্রাসী বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালাচ্ছে। সেটা দেখে ভয়ে বাড়ির ভেতর নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিই। এক পর্যায়ে ভাঙচুরের বিষয় বসকে অবগত করি। কিছুক্ষণ পরই সন্ত্রাসীরা বাড়ির মেইন গেট টপকে পালাতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হামলাকারীরা যদি জানতে পারত এই বাড়িতে আমরা তিনজন রয়েছি, তাহলে হয়তো আগে আমাদের ওপর হামলা হতো। দুর্বৃত্তরা বাড়ির মেইন গেট টপকে এসে দোতালায় সব জানালা এবং গেটের সামনে থাকা দুটি গাড়ি ভেঙেছে।’
টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানভীর আহমেদ কালবেলাকে বলেন, রাতে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়। এ ছাড়া সারা দিনব্যাপী পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর বাসভবনের সামনে দুটি গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং বাড়ির ভেতরে দোতলার জানালাসহ বেশ কিছু যন্ত্রাংশ ভেঙেছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় যারাই জড়িত, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনে আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী রোববার দুপুরে থানায় একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
এদিকে রোববার দুপুরে নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার বাড়িতে গতকাল (শনিবার) রাতে হামলা করেছে, কারা করেছে আমরা জানি না। ১০ থেকে ১২ জন লোক ঢিল ছুড়েছে, গাড়ি ভেঙেছে। আমি মামলা করব।’
তিনি বলেন, ‘কোটাবিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর আমরা এই স্বৈরাচারী মনোভাব আশা করিনি। আওয়ামী লীগ যদি স্বৈরশাসক হয়, তাহলে আজকের কর্মকাণ্ডকে কী বলে অভিহিত করব? দেশে হাসিনার সঙ্গে ২৬ বছর রাত-দিন সংগ্রাম করেছি। আওয়ামী লীগ আমাদের বহু প্রোগ্রাম করতে দেয়নি। তারপরও যদি সবাইকে আওয়ামী লীগের দোসর বানানো হয়, তাহলে তো আমি মনে করব বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ব্যর্থ ও ধ্বংস করার জন্য এটা কোনো ষড়যন্ত্র কি না?’
কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমার বাড়ি ভেঙেছে, আরও ভাঙুক। বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িতে যখন গিয়েছিলাম, তখন আমার গাড়ি ভেঙেছিল। আরও ভেঙে যদি দেশে শান্তি স্থাপিত হয়, দেশের কল্যাণ হয়, আমি সবসময়ই রাজি আছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জীবনে দালাল ছিলাম না, দালালি করিনি। কিন্তু জয়বাংলা থাকবে কি না— সেটা দেশের মানুষ বিচার করবে। আমার কাছে মনে হয় দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ খুঁজছে। সেই সুযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিচ্ছে কি না, আমি ঠিক বলতে পারব না। আমার বাড়ি যদি নিরাপদ না থাকে, তাহলে সাধারণ গরিব-দুঃখী মানুষের বাড়ি নিরাপদ কেমন করে হয়?’
সরকারের উদ্দেশে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি এ সরকারকে সরে আসতে বলব। আমার বাড়ির ওপরে হামলার মধ্য দিয়ে এই চোরাগুপ্তা হামলা বন্ধ করা হোক— সরকারের কাছে নিবেদন করছি। দেশবাসীর কাছে নিবেদন— আপনারা জাগ্রত হোন, রুখে দাঁড়ান।’
মন্তব্য করুন