ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের জোরবাড়িয়া কালাকান্দা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ইচাইল বিল শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়; বরং এর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বটগাছের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। প্রায় পাঁচশ বছরের পুরোনো এই বটগাছকে ঘিরে রয়েছে রহস্য, লোককথা আর মানুষের অগাধ বিশ্বাস।
বিলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজদেহী এই বটগাছ শত শত ঝুরি ও শিকড়ে গড়ে তুলেছে এক বিশালাকৃতির প্রাকৃতিক দুর্গ। স্থানীয়দের কাছে এটি কেবল একটি গাছ নয়; বরং কালের সাক্ষী, লোকজ কাহিনি আর রহস্যময়তার প্রতীক।
এলাকার প্রবীণরা জানান, একসময় গাছটিকে ঘিরে ভয় আর আতঙ্ক বিরাজ করত। দিনের আলোতেও লোকজন সহজে গাছটির কাছে যেত না। প্রচলিত ছিল, এখানে নাকি ভয়ংকর জ্বিন-শয়তানের বসবাস। অনেকেই অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বলে দাবি করেন। এসব গল্প আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে কৌতূহলের খোরাক হয়ে আছে।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাছটির গুরুত্ব পেয়েছে ভিন্ন রূপ। এখন অনেকেই এখানে মানত করতে আসেন। বিশ্বাস করেন, গাছের নিচে প্রার্থনা করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এজন্য কেউ গরু, ছাগল, হাঁস কিংবা মুরগি উৎসর্গ করে থাকে। এভাবে জায়গাটি এক অলৌকিক তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয়দের উদ্যোগে গাছের পাশে একটি নলকূপ বসানো হয়েছে, যাতে দূরদূরান্ত থেকে আসা মানতকারীদের পানির কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়। তবে এতকিছুর মাঝেও দুঃখজনক বিষয় হলো—গাছটির সুরক্ষা ও সংরক্ষণে কোনো সরকারি উদ্যোগ নেই। ফলে ধীরে ধীরে এর চারপাশে অব্যবস্থাপনা বাড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শের আলী বলেন, আমরা ছোটবেলায় বটগাছের চারপাশে গরু চড়াতাম। তখন আমরা মানুষের হাড় পড়ে থাকতে দেখেছি।
সম্প্রতি ৬নং ফুলবাড়িয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বাদল বলেন, ‘গাছটির বয়স সঠিকভাবে কেউ বলতে পারে না। আমাদের বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি, এখানে জ্বিন-শয়তান বাস করত।’
একই ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘গাছটি বহু পুরোনো। এর বয়স আমরা শুধু পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি, লিখিত কোনো তথ্য নেই।’
উল্লেখ্য, মানুষের বিশ্বাস, কাহিনি আর ইতিহাসের মিশেলে এই বটগাছ এখন একটি অনন্য সাংস্কৃতিক ও লোকজ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। যথাযথ উদ্যোগ না নিলে এ ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক সম্পদ অবহেলায় হারিয়ে যেতে পারে।
মন্তব্য করুন