তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ক্লাসে ফিরেছে রূপলালের ছেলে

রূপলাল রবিদাসের ছেলে জয় রবিদাস। ছবি : সংগৃহীত
রূপলাল রবিদাসের ছেলে জয় রবিদাস। ছবি : সংগৃহীত

চুরির অপবাদে গণপিটুনিতে বাবা রূপলাল রবিদাসের নিহতের পর বাবার পেশায় (মুচির কাজ) ফিরতে হয়েছিল জয় রবিদাসকে। রংপুরের তারাগঞ্জ বাজারের ছোট্ট কাঠের চৌকিতে বসে জুতা সেলাই করে পরিবারের ভরণপোষণের তাগিদে উপার্জনে নামতে বাধ্য হয় ১৪ বছরের এ কিশোরকে।

জয় তারাগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবার মৃত্যুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তার পড়ালেখা, ছেড়েছিল স্কুলে যাওয়া। অভাবের সংসার চালাতে নিয়মিত বসতেন বাবার (রূপলাল রবিদাস) ছোট্ট চৌকিতে মুচির পেশায়।

দৈনিক কালবেলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফুটপাতে বসে জয়ের জুতা সেলাইয়ের ছবি ও সংবাদ প্রকাশ হলে অসংখ্য মানুষ ও প্রতিষ্ঠান সাহায্যের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এতে উপজেলা প্রশাসন ও গণমানুষের সহযোগিতায় আবারও স্কুলে ফিরেছে জয়, হাতে তুলে নিয়েছে বই-খাতা। এখন তার স্বপ্ন, পড়ালেখা করে একজন আইনজীবী হওয়ার।

জয় রবিদাস বলেন, আমাদের পরিবারের পাশে অনেকেই সাহায্য-সহযোগিতায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু বাবার অনুপস্থিতি আমাদের জন্য ভীষণ কষ্টের। বাবার মৃত্যুর কষ্ট আমাদের সবসময় কাঁদায়।

সে আরও জানায়, অনেকের সহযোগিতায় আমার পড়ালেখা করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমি আবার নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছি। সহপাঠী এবং শিক্ষকদের সহযোগিতা ও উৎসাহ পাচ্ছি। আমি পড়াশোনা করে আইনজীবী হতে চাই।

জয়ের বড় বোন নূপুর বলেন, বাবা ছিলেন আমাদের খুঁটি, শক্তি আর অনুপ্রেরণা। তার মৃত্যু ছোট ভাইয়ের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ায় আমরা নিরুপায় ছিলাম। তবে অনেকের সাহায্য-সহযোগিতায় আশায় ফিরেছে আমাদের ভবিষ্যৎ।

জয়ের মা মালতি রানী রবিদাস বলেন, বড় স্বস্তির খবর ছেলেটা আবার স্কুলে ফিরেছে। আমার স্বামী ছিলেন সংসারের একমাত্র আয়ের ভরসা। ফুটপাতে জুতা সেলাই করে সংসার ও সন্তানের পড়ালেখা ভালোই চলত।

তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবু মুসা বলেন, আমরা সবসময় চেয়েছিলাম, জয় ক্লাসে ফিরে আসুক। তার স্কুলে ফিরে আসায় আমরা অনেক খুশি, তাকে মানসিকভাবে সাহস ও প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছি। সে মেধাবী ছাত্র, আমরা চাই সে মানুষের মতো মানুষ হোক।

তারাগঞ্জ থানার ওসি এমএ ফারুক বলেন, রূপলাল ও প্রদীপ দাস হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা এবং তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে।

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, পরিবারটি জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং সবসময় খোঁজখবর নেওয়া হয়। রূপলালের বড় মেয়ে নূপুরের জন্য একটি চাকরি ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য বাজারে দোকানঘর দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান। সন্তানদের পড়াশোনাও নিশ্চিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট রাতে উপজেলার বুড়িরহাট বটতলায় ভ্যান চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন রূপলাল রবিদাস ও তার ভাগ্নিজামাই প্রদীপ লাল রবিদাস। পরদিন অজ্ঞাত ৭০০ জনকে আসামি করে রূপলাল রবিদাসের স্ত্রী মালতি রানী মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিছিল শুরু করেই পালিয়ে গেল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ

উত্তরখানে খাল পরিষ্কার কার্যক্রমে বিএনপির মোস্তফা জামান

ডাকসুর বিজয়ীদের নিয়ে জামায়াত আমিরের বিবৃতি

দুই শিবির নেতাকে গুলির অভিযোগে ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবল গ্রেপ্তার

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের বৈঠক

ছাত্রলীগ কর্মীর হাত-পায়ের রগ কাটল হেলমেটধারীরা, অভিযোগ শিবিরের বিরুদ্ধে

খোঁজ মিলল নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির

ডাকসুর লড়াইয়ে ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ ভোট পেলেন যারা

কুলদীপের ঘূর্ণিতে ৫৭ রানে বিধ্বস্ত আরব আমিরাত

বৃষ্টি ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা আবহাওয়া অফিসের

১০

পুলিশের হাতকড়া নিয়ে পালালেন সন্দেহভাজন যুবক

১১

৮০ হাজার ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক 

১২

জাফলংয়ে পানিতে ডুবে পর্যটক নিখোঁজ

১৩

বর্তমান সময়ে রাজাকার কারা? ফারুকীর স্ট্যাটাস

১৪

খতমে নবুওয়াত রক্ষায় ঢাকায় আন্তর্জাতিক মহাসমাবেশ ১৫ নভেম্বর 

১৫

সরকারি ক্রয় নীতিতে আসছে আমূল পরিবর্তন

১৬

বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট জেটিঘাটে ড্রেজিং বন্ধ চেয়ে রিট

১৭

ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ কমলো

১৮

নরসিংদীতে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

১৯

পদ্মার এক কাতল বিক্রি ৪৪ হাজার টাকায়

২০
X