দেশব্যাপী আলোচিত ঘটনা সিলেটে সাদাপাথর লুটের ঘটনা। সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার বরিশালে ঘটেছে শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের ব্লক লুটের ঘটনা। রাত নামতেই বরিশাল নগরী এবং সদর উপজেলা প্রান্তে কীর্তনখোলা নদীতীরের সরকারি ব্লক লুট করছে একটি মহল।
সবশেষ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে কীর্তনখোলা নদীর তীরে সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহাবাজ উলালঘনী এলাকায় বেড়িবাঁধের ব্লক লুটের সময় ব্লক ভর্তি একটি ট্রলারসহ চালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা।
আটক ট্রলার চালক শাহে আলম হাওলাদার বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হাওলাদারের ছেলে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানার ওসি নাজমুল নিশাত এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে রাতের আঁধারে ওই এলাকার শহররক্ষা বাঁধের ব্লকগুলো ট্রলারযোগে লুট হচ্ছিল। এই লুটের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মচারী ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন। প্রভাবশালীদের ভয়ে তারা কখনও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছিলেন না।
আটক ট্রলার চালক শাহে আলমের বরাতে স্থানীয়রা আরও বলেন, তিনি পলাশপুর এলাকার রাজিব নামের এক ব্যক্তির ট্রলারের চালক। তার ট্রলারটি সোহাগ গাজী ও কবির গাজী নামের দুই ব্যক্তি ভাড়ায় নিয়েছে। ঠিকাদারের নির্দেশে ব্লকগুলো ট্রলার ভর্তি করেও বাকেরগঞ্জ উপজেলার নেহালগঞ্জে যাওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন ট্রলার চালক।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন চৌধুরী জানান, ট্রলার চালককে আটকের পর সে সাকিল নামের এক ব্যক্তিকে ফোনে ধরিয়ে দেওয়ার পর তিনি (সাকিল) জানিয়েছেন, পানি উন্নয়নে বোর্ডের একজন ঠিকাদার তাদের ব্লক নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের কাছে এর কাগজও রয়েছে। ব্লকগুলো পটুয়াখালীতে নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কাউনিয়া থানার ওসি নাজমুল নিশাত বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক লুটের সঙ্গে আর কারা জড়িত আছে তাদের পরিচয় শনাক্তের জন্য আটক ট্রলার চালক শাহে আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাশাপাশি এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, কীর্তনখোলা নদীর তীব্র ভাঙন থেকে বরিশাল নগরীকে রক্ষা করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় কনফিডেন্স গ্রুপ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেন। বেশ কয়েক বছরের মধ্যে বাঁধের একাধিক স্থান ধসে পরায় প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বর্ষায় আতঙ্ক দেখা দেয় স্থানীয়দের মাঝে।
এ বিষয়ে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল কালবেলাকে বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর এবং পুলিশকে একটি রিপোর্টও আমরা দিয়েছি। মূলত ওই ব্লকগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের নয়। ২০১৭ সালে চরবাড়িয়া এলাকা রক্ষা প্রকল্পের আওতায় খুলনা শিপইয়ার্ড ৭০ হাজার ব্লক ফেলার কথা ছিল। কাজটি বাস্তবায়ন করে নৌবাহিনী। ২০২৩ সালে প্রকল্পটি শেষ হয়।
তিনি আরও বলেন, ৭০ হাজার ব্লকের মধ্যে ১১ হাজার সিসি ব্লক মানসম্পন্ন ছিল না। এ কারণে ওই ব্লক নদীতে ফেলতে দেওয়া হয়নি। এমনকি ওই ব্লকের বিলও পরিশোধ করা হয়নি। সেই ব্লকগুলোই ঠিকাদার প্রকল্প এলাকার মাঠের মধ্যে ফেলে রেখেছে। সেই ব্লকগুলোই লুট হয়। যে কারণে কেন এবং কারা এটা করেছে সেটা আমাদের জানা নেই। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মচারী এর সঙ্গে জড়িত বলে শোনা গেলেও এর কোনো প্রমাণ মিলছে না। যথাযথ প্রমাণ পেলে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মন্তব্য করুন