রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দুই বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের মাটি কাটায় তৈরি হয়েছে বিশাল গর্ত। স্থানীয়দের অভিযোগ—ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজেরাই উপস্থিত থেকে মাটি কেটে নিয়েছেন। প্রশাসনের দাবি, পাশেই তৈরি হবে একটি মিনি শিশুপার্ক। কিন্তু মাঠের মাঝেই গভীর গর্ত আর ধসে পড়া মাটির কারণে এখন ঝুঁকিতে দুই স্কুলের ভবন।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে চর আষাড়িয়াদহের কানাপাড়া প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে মাটি কেটে অন্যত্র ফেলা হয়। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে গর্ত এখন গভীর পুকুরে পরিণত। মাঠে খেলতে যাওয়া বাচ্চাদের জন্য এটি ভয়ানক বিপদ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আঙ্গুর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘হঠাৎ করেই এত বড় গর্ত খোঁড়া হলো, মানুষ কিছুই জানে না। বাচ্চারা যে কোনো সময় পড়ে গিয়ে প্রাণ হারাতে পারে। দুই স্কুলের পাশে এই কাজ ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করেছে।’
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব মো. সামিম জানান, ‘এরই মধ্যে এ গর্তে দুই শিশু পড়ে গিয়ে মৃত্যুমুখে পড়েছিল। স্থানীয়দের তৎপরতায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছে তারা। তার আশঙ্কা, ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফতাব উদ্দিন জানান, তিনি ইউএনওকে অনুরোধ করেছিলেন অন্য জায়গা থেকে মাটি আনার জন্য। কিন্তু ইউএনও তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, পরে ভরাট করে দেবেন। এমনকি বলেছিলেন, ‘আমি ইউএনও বলছি। আমার ওপর ভরসা করতে পারছেন না?’
কানাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজগর আলীও একই অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জানান, চেয়ারম্যান বলেছিলেন সরকারি কাজের জন্য মাটি প্রয়োজন। আপত্তি জানালেও শোনা হয়নি। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম বেশি গভীর হবে না। কিন্তু এখন আমার প্রতিষ্ঠানও ঝুঁকিতে।’
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা অবশ্য ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘আমরা স্কুলের জায়গাতেই একটি শিশুপার্ক করছি। বন্যার কারণে অন্য কোথাও মাটি পাইনি। তাই সেখান থেকে মাটি তোলা হয়েছে। স্কুলের শিক্ষক ও সবার সঙ্গে কথা বলেই করেছি। আমরা মাটি অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছি না।’ তিনি আরও দাবি করেন, মাটি তোলার সময় ইউএনও নিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘সেখানে একটি মিনি শিশুপার্ক তৈরি হবে। এজন্য খেলনা বসাতে মাটি ভরাট প্রয়োজন। বর্ষার কারণে কোথাও মাটি পাওয়া যায়নি। তাই ওখান থেকে মাটি নিতে বলা হয়েছিল। আমাদের পরিকল্পনা ছিল মাঠ ভরাট করে দেব। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব হয়তো বেশি গভীর করে ফেলেছেন। তবে বিষয়টি আমি দেখছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন