রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল কোনো দিন আওয়ামী লীগ করেননি। তার পরিবারের সবাই জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এমপি নিজেও বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিবিরের নেতা ছিলেন যা বাগমারার মানুষ সবাই জানে। এমনকি এমপি এনামুল ড. ইউনূসের অন্যতম সহযোগী। আমি নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ড. ইউনূসের সঙ্গে এমপি এনামুলের ছবি দেখেছি বলে মন্তব্য করেছেন বাগমারার তাহেরপুর পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও সাফল্য তুলে ধরে রাজশাহীর বাগমারায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গণমিছিল ও সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের যাদেরকে পদে বসানো হয়েছে তাদের মধ্যে ৪৬ জন কোনোদিন জয় বাংলা স্লোগান দেয়নি। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে এসে এমপি এনামুল তাদেরকে উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ দিয়েছেন। এমপি সাহেবের বাড়ির পাশে যাত্রাগাছী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার পরও এমপি তাকে সেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখা হয়েছে। এমনকি কিছুদিন আগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবি জানাজা বাগমারার কোথাও হয়নি। তার বাড়ির কাছে এমপি এনামুলের পারিবারিক মৌলভী উত্তর একডালা মাদ্রাসার সুপার মোফাজ্জল হোসেনের তত্ত্বাবধানে সেই গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এই মোফাজ্জল এমপির সমস্ত প্রোগ্রামে মোনাজাত পরিচালনা করে। এমনকি এমপির বাবা-মায়ের কবর জিয়ারতও এই মাওলানা করে থাকেন। অথচ তিনি সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পরিচালনা করেছে। আসলে কী বলব, মূলত এমপি এনামুল অনুপ্রবেশকারী। তিনি কোনোদিন আওয়ামী লীগ করেননি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনের সময় এমপি এনামুল তারেক জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচন করতে মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করেছিলেন। এবারও বিএনপির মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে গোপনে ২-৩টি সেটিং দিয়েছেন। কাজেই বাগমারা ৯৫ শতাংশ আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা চাচ্ছেন, যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ করেন তাদের একজনকে এবার নৌকার মনোনয়ন দেয়া হোক।
অধ্যক্ষ কালাম বলেন, বাগমারায় যত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ টিআর-কাবিখার যত বরাদ্দ আসে একটি টাকারও কাজ হয় না। কিছুদিন আগেও তিন কোটি টাকার টিআর এসেছিল। উনি (এমপি) ইতোমধ্যেই সব বিক্রি করে দিয়েছেন। উনার কেএন ইঞ্জিনিয়ারিং নামে তার ছোট ভাইয়ের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঢাকায় বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের পড়ে থাকা কিছু টাইলস নিয়ে এসে বাগমারার বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়েছে। এভাবে তিনি সব প্রকল্প আত্মসাৎ করে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, এমপি এনামুলের দুঃশাসন থেকে মুক্ত করতে আমরা এবার একটা স্লোগান ঠিক করেছি তা হলো ‘হঠাও এনামুল, বাঁচাও বাগমারা’। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে করজোরে অনুরোধ করতে চাই, আমরা প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়েছি। এছাড়া আমরা ৫ জন নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী একত্রিত হয়ে কাজ করছি। যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে আমরা কাজ করে নৌকাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়যুক্ত করব।।
এর আগে রোববার দুপুর ১২টার দিকে বাগমারা উপজেলা চত্ত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ভবাণীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে বাগমারা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে এসে শেষ হয়। পরে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ও শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধার সভাপতিত্বে মিছিলোত্তর সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও বাগমারার নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পত্যাশী অ্যাডভোকেট মো. ইব্রাহীম হোসেন, তাহেরপুর পৌর মেয়র, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ উপ-কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. পিএম সফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সোবহান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক মাহাবুর রহমান প্রমুখ।
গণমিছিলে উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার প্রায় ১০ হাজার তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
মন্তব্য করুন