নওগাঁর সাপাহারে সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপনের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত টাকা আদায়, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং গভীরতা কমিয়ে কাজ করা হয়েছে।
ফলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ‘সবার জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ’ প্রকল্পে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। আর ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের জনকল্যাণমূলক বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পটি।
জানা গেছে, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে মোট ৭২টি সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপনের কাজ পেয়েছে কামাল এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৯৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে নিয়মনীতি ও মানদণ্ড লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দরপত্র অনুযায়ী পাম্প স্থাপনের আগে ডুয়েট (DUET) থেকে যে ব্র্যান্ডের পাম্প টেস্টিং ও অনুমোদনের কথা ছিল সেটি ব্যবহার করা হয়নি। বোরিং পাইপও এক কোম্পানির উল্লেখ থাকলে অন্য কোম্পানিরটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো খুবই নিম্নমানের। একইভাবে ফিল্টার ব্যবহারে ‘ই ক্লাস’ মানদণ্ড অনুসরণ না করে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ডি ক্লাস’ মানের।
এ ছাড়া থ্রেড পাইপ ও এলবো সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও দরপত্র অনুযায়ী উন্নতমানের সামগ্রী দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ব্যবহার করা হয়েছে সস্তা ও নিম্নমানের পণ্য। এর ফলে অনেক জায়গায় কয়েক দিনের ব্যবধানে পানি সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে, কোথাও কোথাও পানি উঠছেই না। নির্ধারিত সেবা ফি ৭,০০০ টাকা হলেও উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
দরপত্র অনুযায়ী, প্রতিটি নলকূপের বোরিং গভীরতা হওয়া উচিত ছিল ২৫০ ফুট, যাতে আর্সেনিক ও আয়রনমুক্ত পানি পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ স্থানে বোরিং করা হয়েছে মাত্র ১২০ থেকে ১৫০ ফুট, ফলে অনেক জায়গায় আয়রনযুক্ত পানি উঠছে এবং কোনো কোনো পাম্প থেকে পানি উঠছেই না।
সাপাহারের কলমুডাঙ্গা দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা কৃষক মানুষ হলেও পাইপের মান বুঝি। যে পাইপ বসানো হয়েছে তা নিম্নমানের। আবার গভীরতাও কম দেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
উত্তর কলমুডাঙ্গার বাসিন্দা মেসবাউল হক জানান, সেবা ফি ৭ হাজার টাকা হলেও আমাদের কাছ থেকে ৭২০০ টাকা নিয়েছে। এমনকি অনেকের কাছ থেকে ৫০০-৭০০ টাকা অতিরিক্তও নিয়েছে।
দক্ষিণ পাতারী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ২৫০ ফুট গভীরে পাম্প বসানোর কথা থাকলেও আমাদের এলাকায় মাত্র ১২০ ফুট গভীর করে দিয়েছে। নিম্নমানের মটর ও ফাঁটা পাইপ বসানোর কারণে এখন পানি উঠছে না ঠিকমতো।
সাপাহার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল গাফফারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি রিসিভ হয়নি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কামাল এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম মোবাইল ফোনে কালবেলাকে বলেন, আমি নতুন এসেছি। একটু সমস্যার কারণে এই প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
কামাল এন্টারপ্রাইজের নির্বাহী পরিচালক সজীব মোবাইল ফোনে কালবেলাকে বলেন, কোনো অনিয়ম করা হয়নি। স্বচ্ছ পানির জন্য কিছু কিছু জায়গায় একটু কম পাইপ বসানো হয়েছে। যেটা নিয়মের মধ্যে আছে। আর ডি ক্লাস মানের কোনো জিনিস আমাদের ওখানে ব্যবহার হয়নি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আলম মোবাইল ফোনে কালবেলাকে বলেন, যাদের অভিযোগ আছে, তাদেরকে আমার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।
মন্তব্য করুন