রংপুরের পীরগাছার একটি ধানক্ষেত থেকে গত ২১ সেপ্টেম্বর মাসুদ রানা নামে এক যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল পুলিশ সদস্যের মধ্যে। প্রাথমিক আলামত হত্যাকাণ্ড মনে হলেও তথ্য ছিল অজানা। এবার সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে পীরগাছা থানা চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে মাসুদের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ঘটনা জানান রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আসিফা আফরোজ আদরী।
তিনি জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে মাসুদের দুই বন্ধু রিয়াদ হাসান রকি (১৯) ও গাউসুল আজম হিরন (২৫)-কে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন বক্তব্য দেওয়ায় তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে এবং জড়িত অন্যদের নাম প্রকাশ করে। পরে আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে অভিযান চালিয়ে মূল আসামির মা মোছা. রনজিনা বেগম (৪০) ও স্ত্রী মোছা. লুফা আক্তার (১৮)-কে গ্রেপ্তার করা হয়। তারাও রিমান্ডে হত্যার পর মরদেহ গুমে সহযোগিতা করার কথা স্বীকার করে।
ঘটনার বিবরণে জানান, মাসুদ দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় থাকলেও ব্যক্তিগত কারণে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দাদা বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর তিনি বন্ধু রিয়াদের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ইয়াবা বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে রিয়াদ ক্ষিপ্ত হয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান মাসুদ। পরে মরদেহ বস্তায় ভরে প্রথমে খাটের নিচে, পরে পরিত্যক্ত একটি দোকান ঘরে লুকিয়ে রাখা হয়। পরে গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ২১ সেপ্টেম্বর ভোরে মরদেহ একটি ধানক্ষেতে ফেলে দেওয়া হয়। সেদিন দুপুরে স্থানীয়রা মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দিলে তা উদ্ধার হয়। প্রথমে মরদেহটি অজ্ঞাতনামা হিসেবে চিহ্নিত হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হলে হত্যাকারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করে। এ সময় তারা স্থানীয় সৈয়দ আলী নামে একজন ব্যক্তির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে। তবে পুলিশের তদন্তে শেষমেষ প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে।
এ ঘটনায় নিহতের দাদা আব্দুল করিম বাদী হয়ে পীরগাছা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মন্তব্য করুন