

অস্থির কোনো প্রেক্ষাপটে একদল মানুষকে আশ্বাস দিয়ে কথা বলছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা। সামনে দাঁড়ানো মানুষগুলোর উদ্দেশে তিনি বলছেন, নিজের জীবন দিয়ে হলেও তিনি মন্দির রক্ষা করবেন। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এমন একটি ভিডিও।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ওই সেনা কর্মকর্তার যে প্রজ্ঞা দেখা যায় ভিডিওতে, তা নজর কেড়েছে নেটিজেনদের। এর সূত্র ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতি বাঁচাতে ওই কর্মকর্তা এবং সেনাবাহিনীর চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন সবাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবন দিয়ে মন্দির রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া ওই কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি সদর জোনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খাদেমুল ইসলাম। গত শনিবার রাতে খাগড়াছড়িতে ভাইরাল হওয়া ওই বক্তব্য দেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, খাগড়াছড়িতে এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে উঠলে শনিবার ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এর মধ্যে দিনভর জেলার বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ঘটে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা। দিনভর সংঘর্ষের পর খাগড়াছড়ির সদরের একটি বৌদ্ধ বিহারের সামনে জড়ো হয় স্থানীয় কিছু যুবক। তারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সড়কে অবস্থান নেওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে পৌঁছায়।
ওই যুবকরা তখন দাবি করেন, একটি পক্ষ হামলা চালিয়ে তাদের মন্দির ভেঙে ফেলবে। এজন্য তারা পাহারা দিতে এসেছেন। উত্তেজিত সেই যুবকদের নিবৃত্ত করতে তখন এগিয়ে যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খাদেমুল। ওই যুবকদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, আমি আমার জীবন দিয়ে মন্দির রক্ষা করব। তোমরা জায়গা ফাঁকা করে দাও। এখানে একটা পিঁপড়াও আসতে পারবে না। আমি বলছি, আমি আমার সৈনিকের জীবন দিয়ে হলেও এ মন্দির রক্ষা করব। হাতে হাত দিয়ে বলছি, আমার জীবন থাকতে এ মন্দিরে কেউ হাত দিতে পারবে না; কিন্তু ১৪৪ ধারার আন্ডারে তোমাদের এখন এই এলাকা ফাঁকা করে দিতে হবে। আমার সৈনিক এখানে সারারাত থাকবে। তোমরা চলে যাও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খাদেমুল ইসলামের আশ্বাস শুনে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখান থেকে চলে যান ওই যুবকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই মন্দিরে পরবর্তী সময়ে কোনো হামলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে সেনা কর্মকর্তা খাদেমুলের ওই বক্তব্যের ভিডিও শেয়ার করে আব্দুল আলিম নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময়ই আমাদের গর্ব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে আসায় আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধা।
নাঈম নামে একজন লেখেন, জীবন দিয়ে মন্দির রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি—এটা শুধু দায়িত্ব নয়, মানবতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
খাগড়াছড়িতে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এই অঞ্চলে সম্প্রীতি রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগ করে কাজ করছি। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। আমরা আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু স্বার্থান্বেষী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সেনাবাহিনীকে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি করার চেষ্টা করছে। আমরা এসব ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ আছি।
মন্তব্য করুন