রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে টানা চার দিন ধরে চলা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের মাত্র ২ ঘণ্টা পর আবারও বন্ধ হয়ে গেছে দূরপাল্লার বাস চলাচল। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে সমঝোতার মাধ্যমে রাজশাহী-ঢাকা রুটসহ দূরপাল্লার বাস চালুর সিদ্ধান্ত হয়। পরে বিকেল ৪টা থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়। মালিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করার পরপরই মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে তিনটি বাস ছেড়ে যায়।
তবে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে শ্রমিকরা হঠাৎ কর্মবিরতি শুরু করলে আবারও বন্ধ হয়ে যায় দূরপাল্লার বাস। মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বে বারবার দূরপাল্লার বাস চলাচল এভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বলি হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা, পোহাচ্ছেন চরম ভোগান্তি।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে মালিকপক্ষ হঠাৎ দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর থেকে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজারগামী পরিবহন যেমন দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, গ্রামীণ ট্রাভেলস, হানিফ, হানিফ কেটিসি পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় শুধু একতা ট্রান্সপোর্ট ও কিছু লোকাল বাস চলাচল করছিল। সোমবার দুপুর ২টার দিকে সমঝোতার মাধ্যমে রাজশাহী-ঢাকা রুটসহ দূরপাল্লার বাস চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বিকেল ৪টা থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়। মালিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করার পরপরই মাত্র ১৫ মিনিটে হানিফ পরিবহনের দুটি ও দেশ ট্রাভেলসের একটি বাস রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তবে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে শ্রমিকরা হঠাৎ কর্মবিরতি শুরু করলে আবারও বন্ধ হয়ে যায় দূরপাল্লার বাস।
বেতন-বোনাস নিয়ে টানাপোড়েন
গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকরা। মালিকদের আশ্বাসে কাজে ফিরলেও ২২ সেপ্টেম্বর আবারও কর্মবিরতি শুরু করেন তারা।
শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, একতা পরিবহন চালক-শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক দিলেও ন্যাশনাল, হানিফ, গ্রামীণ ও দেশ ট্রাভেলসের মালিকরা তা দিচ্ছেন না।
একতা পরিবহন একবার যাতায়াতের জন্য চালককে ১,৭৫০ টাকা, সুপারভাইজারকে ৭৫০ এবং সহকারীকে ৭০০ টাকা দিলেও অন্যান্য পরিবহন গত ১৫ বছর ধরে চালককে মাত্র ১,২৫০ টাকা, সুপারভাইজারকে ৫৭৫ এবং সহকারীকে ৫৫০ টাকা দিয়ে আসছে।
তারা আরও বলেন, খাবার বিল ও বিনা ভাড়ায় দুটি টিকিট দেওয়ার বিষয়টিও তাদের অধিকার, যা একতা পরিবহনে বহাল আছে। তবে মালিকপক্ষ বলছে, এসব অতিরিক্ত দাবি অযৌক্তিক।
যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে
দীর্ঘ চার দিন পর বাস চালুর ঘোষণায় রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনালে ভিড় জমান হাজারো যাত্রী। কিন্তু মাত্র ১৫ মিনিটে তিনটি বাস যাওয়ার পর আবারও বন্ধ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। পরে টিকিট কাউন্টার বন্ধ থাকায় অনেকেই টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন।
ঢাকাগামী যাত্রী মেরিনা বেগম বলেন, ‘টিকিট কাটতে এসে দেখি সব কাউন্টার বন্ধ। শুধু একতা চলছে, সেখানে দীর্ঘ লাইন। গরমে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।’
একতা পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘আমাদের ৩২টি বাস চালু আছে। যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ পড়েছে। এত চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়, তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
উত্তরবঙ্গ বাসমালিক সমিতির মহাসচিব নজরুল ইসলাম হেলাল বলেন, সমঝোতা হয়ে বাস চালুর পর কয়েকজন শ্রমিক বিনা ভাড়ায় তিনটি টিকিট দেওয়ার অযৌক্তিক দাবি তুলে আবারও কর্মবিরতি শুরু করে। সাধারণ শ্রমিকরা বাস চালানোর চেষ্টা করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের দোসর তিন-চারজন শ্রমিক মারধর করছেন। এতে দেশ ট্রাভেলসের এক চালক মারধরের শিকার হন। সমঝোতার পরও এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ঢাকায় জানানো হয়েছে। আশা করি, শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে ও বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে।
মন্তব্য করুন