

চলতি বছরে বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত ১০ মাস ১৭ দিনে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬০ জনে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
অপরদিকে, গত বছরের তুলনায় এবার আক্রান্ত বাড়লেও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কম। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে যেখানে ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেখানে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৪৫ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক কার্যালয়ের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত বিভাগের ছয় জেলায় মোট ২০ হাজার ৬০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দুটি মেডিকেল কলেজসহ সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৯ হাজার ৫৯০ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৫ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪২৫ জন।
সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১৮ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৪৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে মোট আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা আর বেশে হবে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলরা।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই হাজার ৭৭ জন এবং পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজার ৬৯২ জন। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪১ জন এবং শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৯ জন রোগী বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬ জন এবং পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে মৃত্যু হয়েছে একজনের।
এদিকে বছরজুড়ে আক্রান্তের শীর্ষে থাকা বরগুনা জেলায় এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ২৬৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে ১৫ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৬৫ জন। তাছাড়া শেবাচিম হাসপাতালে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়ংশের বাড়ি বরগুনার বিভিন্ন উপজেলায়।
অন্যদিকে শেবাচিম হাসপাতাল বাদে বরিশালের জেনারেল ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৬৮২ জন, বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৪ জন। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের বাইরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩২০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৪৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২ জন।
ভোলা জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭১০ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ২৪ জন। পিরোজপুর জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫২৮ জন, বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৩ জন এবং ঝালকাঠি জেলায় এ পর্যন্ত বিভাগের সর্বনিম্ন ৭৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২৬ জন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ২০২৪ সালে এক বছরে যেখানে মোট ৮ হাজার ৭৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছিল সেখানে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২০ হাজার ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার মৃত্যুর হার কম। গত বছর যেখানে ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে এ বছর মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের।
ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তারা জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছে। বিধায় মৃত্যুর হার কমেছে। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কম। তাই আক্রান্তের হার বেশি। ডেঙ্গুজ্বর থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন