

ঘরভর্তি স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ। কাছের মানুষটির এমন আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় তিন বছর আগে দেশ ছেড়ে ইতালি যাওয়া শরীয়তপুরের যুবক নাঈম ইসলাম শান্ত (২৫) এখন ফিরছেন লাশ হয়ে।
পরিবারের অভিযোগ, ইতালির নেপোলি শহরে ছিনতাইকারীরা তার টাকা-পয়সা ও মালামাল লুটের উদ্দেশ্যে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করেছে তাকে।
নিহত নাঈম শরীয়তপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মাহমুদপুর এলাকার এনামুল হক মাদবর ও তাজিয়া বেগম দম্পতির ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পরিবারের অভাব দূর করার আশায় প্রায় তিন বছর আগে ২০ লাখ টাকা ঋণ করে বিদেশ পাড়ি জমান নাঈম। এক বছর আগে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছান তিনি। পরে নেপোলি শহরের একটি ক্যাম্পে অবস্থান করে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে পরিবারের হাল ধরছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
গত মঙ্গলবার রাতে ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার পথে নেপোলি শহরে তার মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, স্থানীয় দুষ্কৃতিকারীরা তাকে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করছিল। ঘটনার রাতে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা হয় নাঈমকে। বুধবার সকালে এ খবর দেশে পৌঁছালে পরিবার ও স্বজনদের মাঝে শোকের মাতম শুরু হয়।
নিহতের ভাই বাপ্পি মাদবর বলেন, আমার ভাই কাজ শেষে ফেরার পথে প্রায়ই ওই এলাকার কিছু বখাটের জ্বালাতনের শিকার হতো। গত রাতে তারা আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। আমরা দোষীদের বিচার চাই এবং ভাইয়ের মরদেহ দেশে ফেরানোর জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।
নাঈমের চাচাতো ভাই আল-ইমরান বলেন, ইতালিতে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ শোক কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।
নিহতের বাবা এনামুল হক মাদবর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি শুধু একবার আমার ছেলের মুখটা দেখতে চাই। যেভাবেই হোক সরকার যেন আমার ছেলের লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলোরা ইয়াসমিন কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নাঈমের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
মন্তব্য করুন