

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলজুড়ে পেঁয়াজের চারা বিক্রির ধুম পড়েছে। পেঁয়াজের চারার ফলন অনেক ভালো হওয়ায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন চাষিরা। জমিতে কৃষকরা পেঁয়াজের চারা বিক্রি করছেন শ’ প্রতি ১৯ টাকা। তা হাত বদলেই বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকা।
তারা জানান, পেঁয়াজের চারা জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শ’ প্রতি বিক্রি হবে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।
জানা যায়, উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদীবেষ্টিত। গোড়াই পিয়ার, রামনিয়াশা, হোকডাঙ্গা, টিটমা, নাগড়াকুড়া, দড়িকিশোরপুর, মধ্য গোড়াই, কদমতলা, অর্জুন, বিরহিম, সন্তোষ অভিরাম, সাদুয়া দামারহাট, কর্পূরা, খারিজা লাটশালাসহ তিস্তায় ছোট-বড় অসংখ্য চর ভেসে উঠেছে। এসব চরে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে উপজেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬১৯ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৯০ টন। এ ছাড়া উপজেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পেঁয়াজ চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার তিস্তাবেষ্টিত বিভিন্ন চরাঞ্চলে দেখা যায়, পেঁয়াজের চারা বিক্রির ধুম পড়েছে। জমিতে পেঁয়াজ চাষিরা স্থানীয় পাইকারের নিকট শ’ প্রতি ১৯ টাকা দরে পেঁয়াজের চারা বিক্রি করছেন। স্থানীয় পাইকার তা ক্রয় করে উপজেলা ও উপজেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকার পাইকারের নিকট বিক্রি করছেন ২২ থেকে ৩০ টাকা দরে। এদিকে চরাঞ্চলের পেঁয়াজ চাষিরা পেঁয়াজের চারা বিক্রি করে খরচের দ্বিগুণ আয় করছেন। এবারে বাজারে পেঁয়াজের অনেক ঝাঁজ থাকায় পেঁয়াজের চারার চাহিদা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
চর জুয়ান সতরা এলাকার পেঁয়াজ চাষি আব্দুস ছামাদ জানান, প্রায় ১০ শতক জমিতে পেঁয়াজের চারা চাষ করেছেন। এখানে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। পেঁয়াজের চারা অনেক ভালো হয়েছে। জমিতেই স্থানীয় পাইকারের নিকট শ’ প্রতি ১৯ টাকা বিক্রি করে এ পর্যন্ত আয় হয়েছে ১০ হাজার টাকা। আরও আয়ের আশা করছেন ৩০ হাজার টাকা। এবারে পেঁয়াজের চারার এত চাহিদা ও বাজার দর রয়েছে পূর্বে তা কখনো হয়নি। খরচের দ্বিগুণ লাভ হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় পাইকার কালাম মিয়া জানান, চরাঞ্চলে পেঁয়াজের চাষ অনেক ভালো হয়ে থাকে। এবারে পেঁয়াজের চারার চাহিদা থাকায় কৃষকদের নিকট থেকে জমিতে পেঁয়াজের চারা শ’ প্রতি ১৯ টাকা দরে ক্রয় করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাইকারের নিকট ২১ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করে দিচ্ছি। এবারে পেঁয়াজের চারার চাহিদা থাকায় চরাঞ্চলের চাষিরা অনেক লাভবান হবেন।
পান্ডুল ইউনিয়নের চন্ডিজান এলাকার পাইকার আক্কাস আলী জানান, তিস্তার চরাঞ্চলের স্থানীয় পাইকারের নিকট শ’ প্রতি ২৫ টাকা দরে পেঁয়াজের চারা ক্রয় করে নিচ্ছি, যা উপজেলার বাইরে বিভিন্ন বাজারে পাইকারের নিকট শ’ প্রতি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করবেন। এবারে পেঁয়াজের চারার অনেক চাহিদা রয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন জানান, তিস্তার চরাঞ্চলে পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযোগী এলাকা। চরাঞ্চলে অনেক কৃষক পেঁয়াজের চাষ করে থাকেন। এ ছাড়া এবারে বন্যার পানি এসে উঁচু নিচু চরগুলোতে পলি পড়ে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলাদি চাষাবাদ করার উপযোগী হয়ে উঠেছে। এবারে পেঁয়াজের চারার চাহিদা থাকায় পেঁয়াজ চাষিরা অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন