পুরো রাস্তা খানাখন্দে ভরা। কার্পেটিং, খোয়া, বালি আলাদা হয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতে এসব খানাখন্দে পানি জমে ডোবার রূপ ধারণ করে। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের চরবাকর থেকে মোহনপুর ইউনিয়নের ভৈষরকোট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তার এমন দশা।
তিন ইউনিয়নের অন্তত ১৫ গ্রামের মানুষের হাটে-বাজারে যাওয়া বা মহাসড়কে ওঠা এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্যপরিবহনসহ শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। অথচ গত ১০ বছরে এ সড়কে এক কোদাল মাটিও ফেলা হয়নি। ফলে গত ১০ বছর ধরে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
স্থানীয় গ্রামবাসী জানায়, এ সড়ক দিয়ে চরবাকর এলাকার ৪-৫টি ব্রিকস ফিল্ডের প্রায় শতাধিক ট্রাক্টর দিয়ে মাটি ও ইট আনা-নেওয়া করা হয়। দিনরাত ট্রাক্টরে ইট ও মাটি আনা নেওয়ার কারণে সড়ক নির্মাণের দুই-তিন মাস পরই তা ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো সময় ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে এমন স্তূপ হয় এতে বোঝার উপায় থাকে না যে, এটি পাকা সড়ক নাকি কাঁচা সড়ক। পাকা সড়ক ঢেকে যায় মাটির স্তূপের আবরণে। এরপর অল্প বৃষ্টি এলেই পাকা সড়কে কাদায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় মানুষের। এ রাস্তার দুই পাশে অন্তত ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা খুব ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে।
পিরোজপুর গ্রামের অটোরিকশা চালক আবদুল কাদের বলেন, জাফরগঞ্জ, এলাহাবাদ ও মোহনপুর এ তিন ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চলাচল করে এ রাস্তা দিয়ে। আমার নিজের অটোরিকশা উল্টে আমিসহ আহত হয়েছি তিনজন। এর দুদিন পর এলাহাবাদ গ্রামের বয়লার সংলগ্ন মোড়ে ভাঙা রাস্তায় একটি আন্তঃজেলা ট্রাক উল্টে একটি ঘরের ওপর পড়ে যায়। ভাগ্যক্রমে ঘরে কেউ ছিল না। না হলে ঘরে থাকা সবাই মারা যেত। পুরো রাস্তা ভাঙাচোরা ও বড় বড় গর্ত। সিএনজি ও অটোরিকশার পার্টস দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য ভাড়া দ্বিগুণ দিলেও এ রাস্তা দিয়ে যাত্রী আনা-নেওয়া করা হয় না। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা হেঁটে আসা-যাওয়া করে।
স্থানীয় পিকআপ চালক ইব্রাহীম মিয়া জানান, চরবাকর থেকে ভৈষরকোট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা গত ১০ বছরেও সংস্কার করা হয়নি। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কসহ চান্দিনা যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এটি। বর্তমানে এ রাস্তায় হেঁটে চলাচল করাও দায়। অধিকাংশ সময় পিকআপের যন্তাংশ নষ্ট হয়ে যায়। আমরা ভয়ে চলাচল করি।
মোহনপুরের স্থানীয় কৃষক মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, মোহনপুর ও এলাহাবাদ একটি কৃষিনির্ভর এলাকা। এখানকার চাষিরা পার্শ্ববর্তী নিমসার বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে যায় এ সড়ক দিয়ে। অথচ এ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি গত ১০ বছর ধরে ভাঙা ও খানাখন্দ।
দেবিদ্বার উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ চন্দ্র সরকার বলেন, এ রাস্তাটির টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ শেষ হয়েছে কয়েক দিন আগে। আগামী এক মাসের মধ্যে বরাদ্দের অনুমোদন চলে আসবে। এরপর এ রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু হবে।
মন্তব্য করুন