কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নামাজে ইউএনওকে সরতে বলায় চাকরি হারানোর অভিযোগ ইমামের

লালমাই উপজেলার ভূমি অফিস সংলগ্ন ভাটরা কাছারি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। ছবি : কালবেলা
লালমাই উপজেলার ভূমি অফিস সংলগ্ন ভাটরা কাছারি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। ছবি : কালবেলা

মসজিদে জুমার নামাজের সময় ইউএনওকে সরতে বলায় চাকরি হারিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইমাম। ইউএনওর নির্দেশেই চাকরি হারিয়েছেন বলে জানান তিনি। এদিকে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও।

জানা যায়, মসজিদে জুমার নামাজের খুতবা চলছিল। শার্ট-প্যান্ট পরা একজন এসে ইমামের বরাবর প্রথম কাতারে (সারি) বসেন। ইকামত দিয়ে নামাজ শুরুর পূর্বে মুয়াজ্জিন সেই ভদ্রলোককে ইমাম বরাবর জায়গা থেকে একটু সরে তাকে জায়গা করে দিতে বলেন। কিন্তু ভদ্রলোক সরতে আপত্তি করায় ইমামও তাকে সামান্য সরতে অনুরোধ করেন।

নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে ওই ইমাম জানতে পারেন তিনি আর সেই মসজিদের ইমাম নেই। যাকে সরতে বলেছিলেন ওই ভদ্রলোক ছিলেন কুমিল্লার লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফোরকান এলাহি অনুপম।

এদিকে, ওই ইউএনও ক্ষুব্ধ হয়ে একাধিকবার সেই ইমামকে মসজিদের পুকুরের পানিতে চুবানোর হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন চাকরি হারানো সেই ইমাম।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন ভাটরা কাছারি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। ঘটনার দিন সকাল থেকে ইউএনও মসজিদ সংলগ্ন সরকারি পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিলেন। শনিবার বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন মুসল্লিরা। তবে ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন ইউএনও।

মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আবুল বাশার বলেন, খুতবা পড়ার শেষ পর্যায়ে ইমামের বরাবর প্রথম সারিতে শার্ট প্যান্ট পরা একজন ভদ্রলোক এসে বসেন। ইকামত শেষে নামাজে দাঁড়ানোর সময় মুয়াজ্জিন ওই ভদ্রলোককে একটু সরতে বলেন। এরপর আমি নামাজ পড়াই। নামাজ শেষে আমি মসজিদ থেকে বের হলে ওই ভদ্রলোক আমাকে ও মুয়াজ্জিনকে মসজিদের দক্ষিণে সরকারি পুকুরপাড়ে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে উপস্থিত একজন আমাকে প্রশ্ন করেন আপনি ওনাকে চিনেন? আমি বললাম- না। তখন তিনি বললেন, উনি আমাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার। আমি তাৎক্ষণিক বললাম, স্যার আমরা আপনাকে চিনতে পারিনি। তখন ইউএনও স্যার উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘কোনো কথা নেই। তোকে এখন পানিতে চুবাব। তুই কত বড় মাওলানা হয়েছিস তোর ইন্টারভিউ নিব’।

তখন তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহ ও মেম্বার গোলাপ হোসেনকে মোবাইল ফোনে কল করে দ্রুত পুকুরপাড়ে আসতে বলেন। এরপর তিনি বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে ধরতে আমাকে কোরআন-হাদিস ও ইসলামের ঐতিহাসিক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পেরেছি। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় দিতে পারিনি।

চেয়ারম্যান-মেম্বার পুকুরপাড়ে আসার পর ইউএনও স্যার আমাকে প্রশ্ন করেন, আমাকে সরতে বললেন কেন? কোন কিতাবে আছে মুয়াজ্জিন ইমামের বরাবর দাঁড়াতে হবে? তখন স্যারকে বললাম, ‘ইমাম যদি কোনো কারণে নামাজ পড়াতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে ইমামের বরাবর যিনি থাকেন তাকে ইমামের দায়িত্ব পালন করতে হয়। তা ছাড়া আমরা আপনাকে চিনতে পারিনি’।

তখন তিনি বলেন, আপনি নাকি অহংকারী। আমি বললাম স্যার আমরা অহংকার করে আপনাকে সরতে বলিনি। তখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আমাকে পানিতে চুবাবেন বলেন।

একপর্যায়ে তিনি চেয়ারম্যান-মেম্বারকে বলেন, আমি যখন বলব তখন ইমাম, মুয়াজ্জিন ও কমিটির লোকদের আমার অফিসে নিয়ে আসবেন। উত্তরে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন- এমনি গেলে যাবে; না গেলে ধরে নিয়ে আসব। প্রায় ২ ঘণ্টা জেরার পর আমি বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে পুকুরপাড় থেকে পাকা সড়কের দিকে গেলে মসজিদের মুসল্লি ও স্থানীয় ভাটরা গ্রামের জহিরুল ইসলাম নামের একজন আমাকে বলেন, হুজুর আপনি ভালো মানুষ। আপনাকে আমরা অনেক সম্মান করি। ইউএনও স্যার এবং চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে পাঠাইছে। কালকে থেকে আপনি আর মসজিদে আসবেন না। আসলে অপমানিত হবেন।

মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ পারভেজ হোসেন বলেন, আমি ইউএনও স্যারকে চিনতে না পেরে সরতে বলেছিলাম। সে কারণে নামাজের পরে ইউএনও স্যার পুকুর পাড়ে নিয়ে আমাকে ও ইমাম সাহেবকে অনেক প্রশ্ন করেন। উত্তেজিত হয়ে ইমাম সাহেবকে কয়েকবার পানিতে চুবাতে বলেছেন।

মসজিদের মুসল্লি মাসুদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকারি পুকুরে সকাল থেকে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিলেন। জুমার নামাজে সামনের কাতারে তিনি ইমামের বরাবর বসেছিলেন। ইমাম ও মুয়াজ্জিন না চিনতে পেরে উনাকে সরতে বলেছিলেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে নামাজের পরে পুকুরপাড়ে নিয়ে ইমামকে অনেক বকাবকি করেন। পুলিশ ডেকে আনার হুমকি দেন।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি শুক্রবার অন্য মসজিদে নামাজ পড়েছি। আমাদের মসজিদে উপস্থিত ছিলাম না। কিন্তু বিকেলে শুনেছি জুমার নামাজের পরে ইমামের সঙ্গে নির্বাহী অফিসারের সমস্যা হয়েছে।

স্থানীয় পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহ বলেন, ইউএনও স্যার ইমামকে পানিতে চুবাতে বলেছে কিনা আমি শুনিনি। তবে ইমাম মুয়াজ্জিন সঠিক কাজ করে নাই। ইউএনও স্যারকে নামাজের সময় সরতে বাধ্য করেছে। এটা তারা করতে পারে না। তা ছাড়া ইমামের এলেম অনেক কম। ইউএনও স্যারের অনেক সহজ প্রশ্নের উত্তর ইমাম দিতে পারেনি। সে কারণে আমি কমিটির লোকজনকে বলেছি ইমামকে বাদ দিতে।

এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফোরকান এলাহি অনুপম বলেন, ‘মসজিদের ইমাম উপজেলা থেকে নিয়োগ দেয় না। আপনি যে ঘটনার কথা বলেছেন- এমন কোনো ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত নই।’ এ কথা বলেই ফোনের কল কেটে দেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পেহেলগাম হামলার ‘অজুহাতে’ দুই হাজারের বেশি কাশ্মীরি আটক

দুই দিনের অর্ধদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দামের বাবা মারা গেছেন

ফিফা সভাপতির বিলম্বে ক্ষুব্ধ উয়েফা, ফিফা কংগ্রেসে নাটকীয় ওয়াকআউট

শাহবাগ থানা ঘেরাও ঢাবি শিক্ষার্থীদের 

ঈদযাত্রায় বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু

সন্ধ্যার মধ্যে যেসব অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

পাটক্ষেতে মিলল নারীর পোড়া মরদেহ

পাক-যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবিকে ‘বাকওয়াস’ বললেন মার্কিন বিশ্লেষক

বার্সেলোনার লা লিগা জয়ে ইনস্টাগ্রামে মেসির বার্তা

১০

কাকরাইলে জড়ো হচ্ছেন জবি শিক্ষার্থীরা, চলছে অনশনের প্রস্তুতি

১১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুশইনের আশঙ্কায় বিজিবির কঠোর অবস্থান

১২

রূপপুর প্রকল্প ‘বন্ধের ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ

১৩

তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনে জবি শিক্ষার্থীরা

১৪

আনচেলত্তিকে কোচ ঘোষণা করতেই বরখাস্ত ব্রাজিল ফুটবল প্রধান

১৫

পেটে বাচ্চাসহ গরু জবাই, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

১৬

গোপালগঞ্জে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত, আহত ১৮

১৭

‘সব দোষ পাকিস্তানিদের’

১৮

দেড় কোটি টাকার কষ্টিপাথরের মূর্তিসহ যুবক গ্রেপ্তার

১৯

ভারতের আরেকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি পাকিস্তানের

২০
X