জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘এই টাকা ঘুষ নয়,সম্মানী ও পারিশ্রমিক’

শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত
শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগে ও এনটিআরসি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ফাইল অনলাইনে পাঠাতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।

তারা বলছেন, কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে তাকে সরাসরি টাকা দিতে হয়। এ টাকা কম হলে তিনি কটু কথা বলেন। এছাড়া শিক্ষক- কর্মচারীদের অনলাইনে এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠাতে তিনি নিজের বিকাশ নম্বরে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চেয়ে নেন।

এ বিষয়ে জানতে গত মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে শফিকুল ইসলাম স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগে ও অনলাইনে এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠাতে টাকা নেওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ‘এই টাকা ঘুষ নয় সম্মানী ও পারিশ্রমিক’। নিয়োগে সম্মানী ও অনলাইনে এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠাতে পারিশ্রমিক নিই।

এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার দুপুর মুঠোফোনে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিশির কুমার উপাধ্যায় কল করা হলে তিনি ধরেননি।

জানতে চাইলে আক্কেলপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব শফিউল আলম বলেন, কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের ও ফাইল পাঠাতে টাকা নেওয়া অনৈতিকতার মধ্যে পড়ে। এটা একপ্রকার দুর্নীতি ও অনিয়ম।

৫-৬টি স্কুল-মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক ও সুপারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম গত ৫ মে আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এ পর্যন্ত স্কুল-মাদ্রাসা মিলে ৮-১০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া নিয়োগ হয়েছে। এসব নিয়োগে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া ওই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী ও এনটিআরসি শিক্ষকদের এমপিও ফাইল অগ্রায়ন করতে জন প্রতি ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। এই টাকা কেউ বিকাশে কেউবা প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে তাকে দিয়েছেন।

উপজেলার আরকেএম দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম আযম বলেন, সম্প্রতি আমার প্রতিষ্ঠানে মারুফ হোসেন নামে একজন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এতে তিনি খুশি হননি। আরও টাকা দাবি করেছেন। এই টাকার বৈধতা রয়েছে বলে তিনি আমাকে এ টাকার রসিদ দিতে চেয়েছেন। তবে রসিদ দেননি। পরে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রার্থীর অনলাইনে এমপিও আবেদন ফাইল পাঠানোর জন্য ফোনে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে কথা বিকাশে টাকা নিয়েছেন। সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, সম্প্রতি আমাদের বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সম্মানী দিয়েছি। কত টাকা সম্মানী দিয়েছেন তা জানাতে অপারগতা জানান তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, আমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে নিজ উপজেলার স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য। এখানে ডিজির প্রতিনিধিও থাকেন। বেশিরভাগ নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের সাজানো প্রশ্ন করতে বলা হয়। আমরা নিজেদের মতো করে প্রশ্ন করতে পারি না। আগেই প্রার্থী ঠিকঠাক থাকে। পরীক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠান প্রধান একটি খাম ধরিয়ে দেন। খাম খুলে দেখা যায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা রয়েছে। এটা ঘুষ নয়, সম্মানী। আমাকে যে টাকা দেওয়া হয় এটা সম্মানজনক নয়। ডিজির প্রতিনিধিকে আমার চেয়ে আরও বেশি টাকা সম্মানী দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, এনটিআরসি কর্তৃক নিয়োগকৃত শিক্ষকদের অনলাইনে এমপিওভুক্তির জন্য ফাইল পাঠাতে হয়। একজনের ফাইল পাঠাতে অনেক কষ্ট করতে হয়। এ বাবদ শিক্ষকদের কাছে পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা নিই। এটা দোষের কিছু দেখি না।

সম্মানীর টাকা কোথা থেকে আপনাদের দেওয়া হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্য যে টাকা ছাড়া কোন নিয়োগই হয় না। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিলে প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেন। সেখান থেকে তারা খরচ করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডোনেশন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে রাখতে হয়। ব্যাংক হিসাব থেকে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তুলে খরচ করতে হয় কিন্তু ডোনেশনের টাকা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা হয় না।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, দেওড়া উচ্চবিদ্যালয়ে তিনজন কর্মচারী নিয়োগ হবে। কয়েক দিন আগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসে আমাকে বললেন, আমরা আপনাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে দশ হাজার টাকা দিব। আমি বললাম, আমাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিবেন কোনো সম্মানী দিতে হবে না। পরে বিদ্যালয় পরিচালনার কমিটির একজন সদস্য এসে বললেন স্যার নিয়োগে ৪২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। তাহলে বোঝেন। আমি নিয়োগের সম্মানী টাকার রসিদ দেওয়ার কথা নয় মাস্টার রোলে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলেছি। এটা আমার প্রাপ্ত। সরকার থেকে আমাকে এ ব্যাপারে টিএডিএ দেওয়া হয় না। আমি সম্মানীর টাকা আমার আয়কর রির্টানে দেখাব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নতুন ঠিকানায় শিশু জায়েদ

ইরানে ঘটে যাওয়া বড় বড় বিমান দুর্ঘটনা

হত্যার আশঙ্কায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন

রাইসির হেলিকপ্টারের যে সমস্যার কথা জানালেন তুর্কি পরিবহনমন্ত্রী

সমর্থকের বাড়িতে নৈশভোজ, চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অর্থদণ্ড

ভোটের আগের রাতে গোপন প্রচারণা, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রাইভেটকার আটক

বিলাসবহুল গাড়িতে সরকারি লোগো সাঁটিয়ে ৭ লাখ ইয়াবা পাচার

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

বাবার খোঁজে ভারতে যাচ্ছেন এমপি আনারের মেয়ে

ফোর্বসের তালিকায় স্থান পাওয়া ৯ তরুণকে ছাত্রলীগের শুভেচ্ছা

১০

মোবাইল কিনে না দেওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

১১

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাজার বসিয়ে অবৈধ বিদ্যুতের ব্যবসা

১২

র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু, ক্যাম্প কমান্ডারসহ প্রত্যাহার ৪

১৩

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৮২ শতাংশ : বিবিএস

১৪

ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল শিশুর

১৫

জাল স্বাক্ষরে ওষুধ বিতরণের অভিযোগ

১৬

ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আরবদের মুনাফেকি ও সুপার হিরোদের অবদান

১৭

নোয়াখালীতে ৩০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ

১৮

নিপুনের পেছনে বড় কোনো শক্তি আছে : ডিপজল

১৯

ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে চবিতে সাইক্লিস্টের র‍্যালি

২০
X