স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অর্থায়নে নীলফামারীর ডিমলা সদর ইউনিয়নের ভাটিয়াপাড়া চৌপথি হতে তিতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করছে বুলুরাণী ট্রেডার্স। সড়কটির আইডি নং-১৭৩১২৪০৪৬। চলমান এ রাস্তার নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অর্থায়নে নির্মাণাধীন রয়েছে রাস্তাটি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বুলুরাণী ট্রেডার্স রাস্তাটি নির্মাণ করছেন। চলমান এ কাজে অত্যন্ত নিম্নমানের ইট, ইটের খোয়া ও কাঁদামাটিযুক্ত ভিটিবালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ইটের খোয়া এবং ভিটিবালুর পরিমাণের মিশ্রণ ১/১ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ভিটিবালুর পরিমাণ বেশি এবং ইটের খোয়া কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জুলহাস, আব্দুল করিম, শৈলেন চন্দ্রসহ আরও অনেকে এ রাস্তার কাজ তদারকিতে ডিমলা উপজেলার এলজিডির কর্মকর্তাদের গাফিলতি এবং স্বজনপ্রীতি আছে বলেও অভিযোগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলজিইডির ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রংপুর বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত রাস্তা নির্মাণ কাজের জন্য প্রাক্কলিত বরাদ্দ ৮৬ লাখ ৬৪ হাজার ১৬৫ টাকা। চুক্তিমূল্য ৮২ লাখ ৩০ হাজার ৯৫৭ টাকা। রাস্তা নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে রায়েছে-রাস্তার বক্স কাটিংয়ের পর সেই মাটি মিশ্রিত বালু দিয়ে বক্স ভরাট করণ, রোড রোলারের ব্যবহার না করা, পানি কিউরিং না করা এবং নিম্নমানের ইটের খোয়াসহ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ডব্লিউবিএম তৈরি করা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অনিয়মের অভিযোগের পর কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হলেও অফিস কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারের যোগসাজশে এখনো ওই কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদার ও তাদের লোকজন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণের কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম করা হচ্ছে। বালুর পরিবর্তে কাদামাটি দিয়ে তার ওপর নিম্নমানের ইটের খোয়া ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নিম্নমানের ইটেরভাঙ্গা অংশ রাবিশ দিয়ে কাজ করে হচ্ছে। রাস্তার কাজে স্থানীয় সরকার প্রকৗশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক, কার্যসহকারীসহ কাউকে এসে তদারকি করতে দেখা যায়নি। অথচ ইট, ইটের খোয়ায় পা দিয়ে চাপ দিলে তা ভেঙ্গে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘টেন্ডারের চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারের কাজ করার কথা বললেও তিনি কোনো তোয়াক্কা না করে অনুমোদনবিহীন নিম্নমানের ভিটিবালু, ইট ও ইটের খোয়া দিয়ে কাজ সম্পন্ন করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি প্রভাত সাহার কাছে রাস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজের মান এলজিইডি তদারকি করে বিল দেবে। আমরা দরপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। অফিস আমাদের কাছ থেকে শতভাগ কাজ বুঝে নিচ্ছে।’
এলজিইডির ডিমলা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শফিউল ইসলাম বলেন, ‘উন্নয়ন কাজের চুক্তি মোতাবেক কাজ না হলে ও কাজে অনিয়ম হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে নীলফামারী এলজিডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ হাসান বলেন, ‘রাস্তার কাজে অনিয়ম পেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি।’
মন্তব্য করুন