কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘হামুন’ মোকাবিলায় প্রস্তুত কক্সবাজার

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ভিড়। ছবি : কালবেলা
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের ভিড়। ছবি : কালবেলা

উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে একই এলাকায় রয়েছে। এটি মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা নাগাদ কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।

এটি সন্ধ্যা হতে রাতের মাঝে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে কক্সবাজারেও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এটি উপকূল অতিক্রমের সময় কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ উপকূল এবং প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ আশপাশের উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া ১২ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়েছে- উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে একই এলাকায় রয়েছে। এটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। এটি সন্ধ্যা হতে রাতের মাঝে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এটি মঙ্গলবার বিকেল ৩টা নাগাদ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮৫ কি.মি, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও দুর্বল হয়ে সন্ধ্যা হতে রাতে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কি.মির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৯০ কি.মি যা, দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কি.মি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় এলাকার নিকটবর্তী সাগর উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় 'হামুন'র সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সভায় ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তাদের নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলার ৫৭৬টি সাইক্লোন সেন্টার খুলে দেওয়া হয়েছে। জেলার নয় উপজেলার জন্য নগদ টাকা, ১৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে কক্সবাজারের উঁচু উঁচু ভবন বিশেষ করে হোটেল-মোটেল) আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার নয় উপজেলায় ১৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মজুদ রযেছে নগদ টাকা ও শুকনা খাবার।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় 'হামুন'র প্রভাবে সোমবার রাত হতেই কক্সবাজারে সবখানেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রথমে হালকা বৃষ্টি হলেও মঙ্গলবার দুপুর হতে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। বিকেলের পর টেকনাফের সেন্টমার্টিনসহ উপকূলে ঝড়ো হাওয়া শুরু হয় বলে জানিয়েছে জনপ্রতিনিধিরা। দূর্যোগপূর্ণ আবহওয়াতেও সাগরপাড়ে ভীড় করে উৎসুক মানুষ। মেঘাচ্ছন্ন ও বৃষ্টিস্নাত সৈকত এলাকার ছবি ও ভিডিও ধারণ করছেন অনেকে। পরিবার পরিজন নিয়ে সকাল-বিকাল-সন্ধ্যায় সমুদ্র উপভোগ করছে পর্যটকরাও। তবে, সম্ভাব্য দূর্যোগ বিবেচনায় সৈকতে আসা পর্যটকদের গোসলে নিরুৎসাহ দিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছিল বার বার।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে আবহাওয়া অধিদপ্তর মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখালে আমরা দ্বীপে সকল জায়গায় মাইকিং করে সকলকে সর্তক করেছি। দ্বীপে সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হালকা বাতাস বইছিল। কিন্তু দুপুরের পর থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আসায় সাগরে ঢেউ আগের তুলনায় বাড়ছে। দ্বীপের জেটিঘাটের পাশে থাকা একটি ঝাউগাছ বাতাসে ভেঙে পড়ছে। অন্য এলাকাতেও কিছু গাছপালা পড়ে যাওয়ার খবর শুনছি।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল ও বড় ঢেউ হচ্ছে। এ অবস্থায় সাগরে গোসল করা নিরাপদ নয়। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের সাগরে গোসল করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমাদের উপকূলে থাকা সাইক্লোন শেল্টারে সোয়া ৫ লাখ লোক ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। যেকোন দূর্যোগে নিজ নিজ অবস্থান হতে সবাই এগিয়ে এলে তা মোকাবিলা সহজ হয়। অতীতের মতো এবারও আমরা সফলকাম হবো ইনশা আল্লাহ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় হামুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাঙ্গুনিয়ায় পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু

আখাউড়া আনারস প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন

এভারেস্ট জয় করলেন আরেক বাংলাদেশি

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ২০

বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার খবর কী?

সৌদিতে আরও ১ বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

হজ পালনে সৌদি গেছেন ২৮ হাজারের বেশি বাংলাদেশি

জামালপুরে ধর্মঘট পালন করছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা

কী আছে আজ আপনার ভাগ্যে?

‘আমরা নিরাপদে নেই, দুই দিন ধরে না খেয়ে আছি’

১০

ইরানে দুই নারীসহ সাতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

১১

পাঁচ প্রার্থীই আ.লীগের শীর্ষ নেতা, বিভক্ত কর্মীরা

১২

দুপুরের মধ্যে ঝড়ের শঙ্কা, ১০ অঞ্চলে সতর্কসংকেত

১৩

প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরেও সবুজায়ন হয়নি পাবিপ্রবি ক্যাম্পাস

১৪

ব্রিটেনে শিশুর নাম মোহাম্মদ রাখার হিড়িক

১৫

ইতিহাসের এই দিনে স্মরণীয় যত ঘটনা

১৬

সকালের মধ্যে তীব্র ঝড় হতে পারে যেসব জেলায়

১৭

১৯ মে : নামাজের সময়সূচি

১৮

রোববার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

১৯

ধান ক্ষেতে কৃষককে কুপিয়ে হত্যা

২০
X