তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

চলনবিলে থামছেই না পাখি নিধন

পাখি শিকারের জন্য তৈরি ফাঁদ। ছবি : কালবেলা
পাখি শিকারের জন্য তৈরি ফাঁদ। ছবি : কালবেলা

চলনবিলের দুর্গম অঞ্চলে নির্বিকারে চলছে পাখি নিধন। পেশাদার শিকারিরা রাতে বিশেষ ধরনের জাল পেতে নানা প্রজাতির পাখি নিধন করে সকালে গ্রামাঞ্চলে ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে সেই পাখি। আর পাখি নিয়ে কাজ করা কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিছু পাখি উদ্ধার করে অবমুক্ত করলেও স্থায়ীভাবে এখনও চলনবিলঞ্চলে পাখি নিধন ও বিক্রি বন্ধ হয়নি।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) পরিবেশ উন্নয়ন ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ফোরামের সদস্য সাংবাদিক জুলহাস কায়েমের নেতৃতে সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের ক্ষিরপোতা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে তিনটি ফাঁদ ধ্বংস করে ১৫টি বক উদ্ধার করা হয়। পরে সিংড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল ইমরানের সহযোগিতায় ১৫টি বক অবমুক্ত করেছেন ওই সংগঠনটি।

চলনবিল অঞ্চলে পাখিসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও তাড়াশ উপজেলা এলাকায় পাখি শিকার বন্ধে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর তথ্য চিত্র দেখলে বোঝা যায় চলনবিল এলাকায় প্রতি বছর বিপুল সংখক পাখি শিকার হয়।

‘চলনবিল জীব ও বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের স্বেচ্ছাসেবীরা ২০২০ সালে ৩০ জন পাখি শিকারির থেকে পাখি শিকার না করার মুচলিকা নেন। এ সময় তারা বক, ঘুঘু, শ্যামকৈলসহ বিভিন্ন প্রকার শিকার করা ৬০০ পাখি অবমুক্ত করেন। ২০২১ সালে ৫০ জন পাখি শিকারির থেকে মুচলিকা নেন। পাশাপাশি শিকার করা প্রায় এক হাজার ২০০ মতো পাখি অবমুক্ত করেন। আর গত ৯ মাসে শিকার করা এক হাজার পাখি অবমুক্ত করেন ও ৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে প্রায় ১০ জন শিকারি আর্থিক জরিমানা আদায়ের ব্যবস্থা করেন। তিনি দাবি করেন, তারা গত ১০ বছরে চলনবিল এলাকায় শিকার করা প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার পাখি অবমুক্ত করেছেন।

জীব ও বৈচিত্র্য রক্ষায় চলনবিল অঞ্চলে কাজ করেন আরেকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন জীবন।

স্বাধীন জীবনের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক নাসিম জানান, এ সংগঠনটি ২০২০ সালে প্রায় ৫০০, ২০২১ সালে ৫৩০টি ও ২০২২ সালের ৯ মাসে প্রায় ৬০০টির মতো শিকারিদের শিকার করা পাখি উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছেন।

এ ছাড়াও চলনবিল এলাকায় কাজ করেন এমন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দি বার্ডাস সেফটি হাউজের চেয়ারম্যান মামুন বিশ্বাস বলেন, চলনবিল অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবী কিছু সংগঠন পাখি রক্ষায় কাজ করছেন। তারা শিকার করা পাখি অবমুক্ত করলেও তৃণমূল পর্যায়ে জনসচেতনার অভাবে চলনবিল অঞ্চলে স্থায়ীভাবে পাখি শিকার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এখন চলনবিল অঞ্চলে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে নির্বিচারে বিভিন্ন ধরনের পাখি নিধন। শিকারির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না বক থেকে শুরু করে ভাড়ই, রাতচোড়া, টোগা, বালিহাঁস, পানকৈড়, পারিযাতসহ দেশীয় প্রজাতির অনেকে পাখি। আর বর্তমানে চলনবিলের বিভিন্ন গ্রামে প্রতি এক জোড়া ভাড়ই বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা, প্রতি জোড়া বালিহাঁস ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, টোগা প্রতি জোড়া ৯০ থেকে ১১০ টাকা, রাত চোরা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা প্রতি জোড়া, বক প্রতি জোড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চলনবিলাঞ্চলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষকারী পাখি নিধন প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী পাখি নিধন দণ্ডনীয় অপরাধ। আর শীত মৌসুম বা বর্ষার শেষে শরৎকালে খাদ্য ও নিরাপত্তার জন্য দেশীয় ও অতিথি পাখি চলনবিল এলাকায় এসে থাকে। এ সব পাখি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সৌন্দর্য বর্ধন এবং এদের বিষ্ঠায় স্বল্প পরিমাণে জৈব সারের কাজ করার পাশাপাশি ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশকে রক্ষা করে।

রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যাবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মেদ নিয়ামুর রহমান বলেন, বন বিভাগে জনবল সংকট অনেক বেশি। বিশেষ করে ১৬ জেলায় মাঠপর্যায়ে (উপজেলা এলাকায়) জনবলের অভাবে সঠিকভাবে কাজ করতে পারছি না। তবে আমরা পাখি শিকারের খবর পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে পাখি শিকার বন্ধের চেষ্টা করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আফ্রিদির বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি, উকিল খুঁজছেন স্বপন

মুন্সিগঞ্জে ‘গত আগস্টে লুট করা অস্ত্র’ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা

গরিবের স্বপ্নেই থাকে ইলিশ

কেউ ছাই দেওয়া হাত থেকে বের হতে পারবে না : উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন

বাংলাদেশে তিন বছরে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশে

রুট ১৩ হাজার রান ছুঁতেই মুখ খুললেন শচীন

‘উপদেষ্টা মাহফুজের ওপর হামলা হয়নি, কনস্যুলেট অফিস ভাঙচুর হয়েছে'

১৫০ টাকায় দেখা যাবে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ

সাব্বিরকে পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ বিসিবির আকুর

জিয়ার সমাধিতে ডা. সাবরিনার শ্রদ্ধা, যুবদল সভাপতির ক্ষোভ

১০

শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিতর্ক, অর্থপাচার বিরোধী অভিযানে চাপ

১১

অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া মারা গেছেন

১২

ঢাকা শিশু হাসপাতাল শাখা ড্যাবের নতুন দায়িত্বে ডা. ফারুক

১৩

এনসিপির আরও চার নেতার পদত্যাগ 

১৪

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিসের শ্বশুর লুৎফর রহমান

১৫

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার বিধিমালা প্রকাশ

১৬

হাসনাতকে ‌‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বললেন রুমিন ফারহানা

১৭

বিজিবির কাছে ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

১৮

চুরির অভিযোগ, গণপিটুনিতে যুবক নিহত

১৯

সংবিধানের মূলনীতি থেকে আমরা সরে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন

২০
X