মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২
মো. মহিউদ্দিন
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:১৫ পিএম
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

হাকালুকিতে অবাধে পাখি শিকার, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

মৃতপাখিগুলোকে মাটিচাপা দেন আলোকচিত্রীরা। সৌজন্য ছবি
মৃতপাখিগুলোকে মাটিচাপা দেন আলোকচিত্রীরা। সৌজন্য ছবি

শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে উষ্ণতার খোঁজে প্রাণ রক্ষার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিকে প্রিয় আবাস্থল হিসেবে বেছে নেয় পরিযায়ী পাখিরা। তবে বিষটোপসহ শিকারিদের ফাঁদ তাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে ওঠে। অনেকে সামান্য বাড়তি রোজগারের লোভে হাকালুকিতে পরিযায়ী পাখি শিকার করেন। এ জন্য বছরে বছরে পাখিদের বিচরণ কমে গেছে।

জানা যায়, হাকালুকি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও সিলেটের পাঁচটি উপজেলার ১৮১ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। এখানে ছোট-বড় ২৭৩ বিল, ১০ নদী ও অসংখ্য খাল রয়েছে। এই জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখি শিকার সরকারের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি একে ১৯৯৯ সালে পরিবেশগতভাবে সংকটপূর্ণ এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। তবুও এসব এলাকায় পাখি হত্যা চলছে অবাধে। স্থানীয় শিকারিরা পাখি হত্যার জন্য বিষটোপের মতো নিষ্ঠুর ও কুৎসিত পথ বেছে নিয়েছেন।

গত সপ্তাহে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওরের জুড়ীর অংশে নাগুয়া ও চাতলার বিলে পাখি দেখতে ও ছবি তোলার জন্য যান চারজন আলোকচিত্রী, তারা হলেন সৈয়দ আব্দুল, শাহানুল করিম চপল, মো. রিজওয়ানুল করিম ও সুলতান আহমদ। তারা হাকালুকির নাগুয়া বিলে ৩২টি হাঁসপাখির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখতে পান। তারা দেখেন, আশপাশে আরও কয়েক পাখি ধুঁকে ধুঁকে মরছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এ সময় মৃত পাখিগুলো মাটিচাপা দেন তারা। এ ঘটনা তাদের ফেসবুকে লিখে ছবিসহ পোস্ট দেওয়ার পরই মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, শিকারিরা দলবেঁধে বিষটোপ ও জাল দিয়ে পরিযায়ী পাখি শিকার করে। তারা সেসব পাখি গোপনে চড়া দামে বিক্রি করে।

চাতলা বিলের ইজারাদার জমির মিয়া বলেন, হাকালুকি হাওরে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাখির সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। আগে অনেক পাখি দেখতাম এবার এসব চোখে পড়ছে না।

বড়লেখা উপজেলার আজিমগঞ্জ বাজারের পারভেজ মিয়া নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ৭ থেকে ৮ জনের একটি পাখি শিকারি দল শিকার করে নিয়মিত। আমার কাছে পাইকারি পাখি বিক্রি করে। আমি এগুলো স্থানীয় বাজার ও বসতবাড়িতে বিক্রি করি। এটা কিছুটা লাভজনক।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাকালুকি হাওরের প্রতিজোড়া পাখি ১৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। অনেকে অগ্রিম অর্ডার দিয়েও রাখেন। এ কাজটা শিকারি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করে থাকেন।

পাথারিয়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ অনুযায়ী যে কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা, শিকার, ক্রয়-বিক্রয় ও নিজের দখলে রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু শীত মৌসুমে একটি অসাধুচক্র পাখি শিকারের মতো নিকৃষ্ট একটি কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আমরা পাখির শিকার রোধে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছি, তবুও এসব বন্ধ করতে পারছি না।

তিনি বলেন, হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের বেশিরভাগ দেশি প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ছাড়াও পরিযায়ী পাখির বিচরণভূমি হিসেবে দেশের অন্যতম জলাভূমি। আইনের প্রয়োগের অভাবের কারণে মূলত এটি ঘটে। পাখি শিকার ও বিক্রি রোধে কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর হতে হবে।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও শৌখিন বন্যপ্রাণী চিত্রগ্রাহক ডা. মো. রিজওয়ানুল করিম বলেন, হাকালুকি হাওরে পাখি দেখতে ও ছবি তোলার জন্য আমরা চারজন গিয়েছিলাম নাগুয়া ও চাতলার বিলে। তখন আমরা এই নিষ্ঠুর বিষয়টি হতভম্ভ হয়ে যাই। মানুষ মাছ ধরার নামে রাত্রে বিভিন্ন ধরনের জাল ও বিষটোপ প্রয়োগ করে। ভোরবেলা এসে বিষটোপ খেয়ে মরা এই পাখিগুলো জবাই করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকে। এসব পাখি খেয়ে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয় এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডও হতে পারে। একই অপরাধ ফের করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণের বিধানও রয়েছে।

পাখি শিকারিদের তৎপরতা দুঃখজনক মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি পরিযায়ী পাখির মাংস ও দেহের অংশ সংগ্রহ বা দখলে রাখলে অথবা বেচা-কেনা করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

সিলেটের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার বলেন, বিষটোপ দিয়ে পাখি হত্যার বিষয়টি জানার পরে সরেজমিনে এ এলাকা পরিদর্শন করেছি। এ এলাকায় যারা শিকারের সাথে জড়িত তাদের তালিকা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়াও পাখি শিকার রোধে মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সুন্দরবনে ভেসে গিয়ে বেঁচে ফিরলেন কুয়াকাটার পাঁচ জেলে

শিশু হত্যার দায়ে একজনের ৭ বছরের কারাদণ্ড

সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন

যুক্তরাজ্যের বিশেষ দূতের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধিদলের বৈঠক

পাইকগাছা রিপোর্টার্স ইউনিটির দ্বি-বার্ষিক কমিটি গঠন

বৃষ্টি ও ভ্যাপসা গরম নিয়ে নতুন বার্তা আবহাওয়া অফিসের

গুগলে দ্রুত প্রয়োজনীয় তথ্য জানার ৭ কৌশল

পুনরায় বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হলেন মনজুর আলম

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আ.লীগ নেতা ও তার ছেলের ইলিশ শিকার

কবরস্থান-মসজিদ রক্ষায় রেলকর্মীদের আলটিমেটাম

১০

এককভাবে সরকার গঠনে আত্মবিশ্বাসী তারেক রহমান

১১

চাকরিচ্যুত সেনা সদস্যের প্রতারণা, সেনা অভিযানে গ্রেপ্তার

১২

কোরআনে হাফেজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

১৩

বাংলাদেশে নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে তুরস্ক

১৪

৫ দিনের মাথায় আবারও গুলি করে যুবককে হত্যা

১৫

আ.লীগ নেত্রী আকলিমা তুলি গ্রেপ্তার

১৬

এক ভিসায় যাওয়া যাবে আরবের ৬ দেশে, কীভাবে?

১৭

ভৈবর নদে তলিয়ে গেল সুন্দরবনের ট্যুরিস্ট জাহাজ

১৮

অপহরণ করে ১০ কোটি টাকা আদায়ের মামলায় লিপটন কারাগারে 

১৯

আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আ.লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ২১

২০
X