টানা বৃষ্টির পর অবশেষে স্বস্তি পেয়েছেন সুনামগঞ্জবাসী। মেঘলা আকাশ ভেদ করে ৯ দিন পর দেখা মিলেছে রোদের। শুক্রবার (২৩ জুন) পুরো দিনই ছিল রোদ্রজ্জ্বল। অবশ্য বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বিকেলের দিকে কিছুক্ষণের জন্য রোদের দেখা পাওয়া যায়।
এদিকে রোদ উঠায় নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। টানা কয়েকদিন জীবন জীবিকা নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন তারা। রোদ ওঠায় কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পেরে দারুণ খুশি শ্রমজীবীরা।
পৌর শহরের মল্লিকপুর এলাকার আব্দুজ জহুর সেতুর পাশে সড়কে চা বিক্রি করেন হাবিবুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে বৃষ্টিতে ব্যবসা মন্দা আছিল। আজকে সকাল থেকে দিনটা পরিষ্কার। রোদ থাকায় বিকিও (বিক্রি) হচ্ছে।’
নতুন বাস স্টেশনের আখের রস বিক্রেতা বিকাশ দাশ বলেন, ‘আমার কিছু জমি-জিরাত আছে। পাশাপাশি গত ১০ বছর ধরে আখের রস বিক্রি করছি। এবার ধান ভালো হওয়ায় বছরের খোরাকি তুলতে পেরেছি। এমনিতে আখের রস বিক্রি করে দৈনিক আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি হয়। এতে খরচ বাদে লাভ হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। তবে বৃষ্টি হলে ব্যবসাটা বন্ধ থাকে। বৃষ্টির জন্যই ১০ থেকে ১২ দিন ব্যবসা বন্ধ ছিল। ঘরে খাবারের জোগান থাকায় চলতে পেরেছি, নইলে উপোস থাকা লাগত। আজ রোদ উঠায় বিক্রিও ভালোই হচ্ছে।
ওয়েজখালি এলাকার রিকশা ও সাইকেলের মেকানিক শারীরিক প্রতিবন্ধী আজিজুল বললেন, বৃষ্টি হওয়ায় গত কিছুদিন ব্যবসা মান্দা ছিল। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাকে। আজকে রোদের দেখা পাওয়ায় কাস্টমার আসছে, রুজিও ভালোই হচ্ছে।
এর আগে গত ১৪ জুন থেকে অঝোর ধারায় বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাড়ছিল জেলার বিভিন্ন নদীর পানি। শুক্রবারও পাহাড়ি ঢলে জেলার ৪ পয়েন্টে নদীর পানি সামান্য কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়াও একটি পয়েন্টে কমেছে এবং অন্যটিতে অপরিবর্তিত রয়েছে। একমাত্র ছাতক পয়েন্টে গত ১৮ জুন থেকে সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। তবে শুক্রবার ওই পয়েন্টে নতুন করে পানির উচ্চতা বাড়েনি। বৃহস্পতিবারের মতোই ৯ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল সুরমার পানি। যা বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপরে।
এদিকে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ০৭ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে অর্থাৎ ৭ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় সুরমা নদীর প্রবাহিত হচ্ছে। দিরাই উপজেলার পুরাতন সুরমা নদীর পানি শূন্য দশমিক ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে ৫ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার নিচে। যাদুকাটা নদীর পানি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে শূন্য দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপদসীমার ১ দশমিক ৭৩ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। এ ছাড়াও জগন্নাথপুর উপজেলার নলজুর নদীর পানি শূন্য দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় এবং তাহিরপুর উপজেলার পাটনাই নদীর পানি শূন্য দশমিক ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬ দশমিক ০১ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রও জানিয়েছে, কুশিয়ারা ব্যতীত, দেশের উত্তর-পূর্বালের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতলে স্থিতিশীল আছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উজানে ও উত্তর পূর্বালে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এ সময়ে এ অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি সমতলে স্থিতিশীল থাকতে পারে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ দশমিক ০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার জানান, সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। সেজন্য ছাতক পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বৃহস্পতিবারের মতোই ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পয়েন্টে পানি কিছুটা কমেছে এবং অন্য পয়েন্টে সামান্য কিছুটা বেড়েছে।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের লাউড়েরগড় পয়েন্টে ৩৬ মিলিমিটার, ছাতকে ১১ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জে ৬৫ মিলিমিটার এবং দিরাইয়ে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
মন্তব্য করুন