কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে পলিমাটির গুরুত্ব অপরিসীম। ফসলি জমি থেকে পানি নিষ্কাশন, ফসল উৎপাদনে সেচের কাজে, মাছের অভয়ারণ্য তৈরি এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রয়োজন খাল। কালের পরিক্রমায় টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি খাল বিলুপ্তির পথে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় যমুনা নদী বিস্তৃত ছিল শাখারিয়া গ্রাম পর্যন্ত, তখন যমুনার তরঙ্গ প্রবাহিত হতো গোয়ালবাড়ি খাল দিয়ে। গোয়ালবাড়ি খালের একটি শাখা প্রবাহিত হতো হেমনগর-নলিন সড়কের পাশ ঘেঁষে শিমলাপাড়া ব্রিজ পার হয়ে হেমনগরের মধ্যে দিয়ে ভোলারপাড়া খাল দিয়ে ঝিনাই নদীতে।
শিমলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. শরিফুল ইসলাম খান জানান, এসএ ও সিএস রেকর্ডের ম্যাপেও এই খাল দৃশ্যমান ছিল, সর্বশেষ বিএস রেকর্ডের ম্যাপে অদৃশ্য কারণে খালটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। সড়কের পাশে হওয়ায় খাল ভরাট করে বাড়ি ঘর তৈরি ও ফসলি জমির সাথে মিশিয়ে ফেলে জমির মালিকরা। খালটি পুণরায় খননের দাবি জানান তিনি।
খাল থাকার কথা স্বীকার করে হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য, প্রবীণ ব্যক্তি মো. আব্দুস সালাম বলেন, আমি ১৯৭২-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিলাম। এই খালে এক সময় ব্যাপক তরঙ্গ প্রবাহিত হতো দুটি শাখা দিয়ে। একটি শাখা পালপাড়ার সামনে দিয়ে ভোলারপাড়া হয়ে বেলুয়ার ঝিনাই নদীতে প্রবাহিত হতো আরেকটি শাখা বালোবাড়ি গ্রাম হয়ে বড়সারা বিলে প্রবাহিত হতো। যমুনা নদী দুরে চলে যাওয়ায় ও ম্যাপে খালের অস্তিত্ব না থাকায় জমির মালিকরা নব্বইয়ের দশকের পর ধীরে ধীরে ভরাট করে ফেলে। তখন খাল পুনঃখননের জন্য কিছু বরাদ্দ এসেছিল কাজ সেভাবে আর আগায়নি।
শিমলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম মিলন বলেন, খাল থাকা সত্ত্বেও সরকার ১৯৬২সালে আরওআর রেকর্ডে জমি খাস না করায় মূল বিপত্তি বাধে, বিএস রেকর্ডে খালটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়। বালোবাড়ি গ্রামের শাখা দেখিয়ে তিনি বলেন, এটুকু শুধু মানুষের দয়ায় টিকে রয়েছে। সেচ ও গরু বাছুর সাতরানোর জন্য এটুকু তারা টিকিয়ে রেখেছে।
নতুন শিমলাপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক আবুবকর সিদ্দিক পালপাড়ার সামনে দিয়ে খাল থাকার স্মৃতি বর্ণনা করতে থাকেন। এসময় দ্রুত খালটি পুনরায় খনন করতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।
বানীপাড়া গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী, বলেন খালটি থাকলে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হতো, খালটি আবার খননের দাবি জানাই।
হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার হীরা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগে থেকেই খালটি উদ্ধারের জন্য সাবেক চেয়ারম্যানের সাথে কাজ করেছি। এমপি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করেছি, আগের ইউএনও স্যারের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠিয়েছি। কৃষকের স্বার্থে খালটি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসফিয়া সিরাত বলেন, বিষয়টি প্রথম জানলাম, রেকর্ড ও ম্যাপ চেক করে দেখব। খালটি উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন