শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২
জগন্নাথপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ শিক্ষক বরখাস্ত

সুনামগঞ্জ জেলার মানচিত্র। গ্রাফিক্স : কালবেলা
সুনামগঞ্জ জেলার মানচিত্র। গ্রাফিক্স : কালবেলা

দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিভাগ মামলা রুজু করা হয়েছে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার ফলে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুযায়ী এ মামলা করা হয়। ছুটি না নিয়ে উপজেলায় প্রায় ৩০-৩৫ জন শিক্ষক লন্ডন চলে গেছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলায় মোট ১৫৮টি বিদ্যালয় রয়েছে। প্রধান শিক্ষক কর্মরত আছেন ১৫৮ জন, সহকারী শিক্ষক ৭০৪ জন। এর মধ্যে ৩০/৩৫ জন সহকারী শিক্ষক বিদেশে রয়েছেন। সবার বেতন বন্ধ রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুব জামান বলেন, অভিযুক্ত ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৬ জনের বিরুদ্ধে গত ২৪ অক্টোবর বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এর আগে ৮ জন সহকারী শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অপর একজনের অনুপস্থিতির দুই মাস না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়নি। তবে সবার বেতন বন্ধ আছে এবং সরকারি চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

অভিযুক্ত ১৬ শিক্ষক হলেন- সালদিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাওছার হামিদ, সালদিঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. আফছানা খানম আন্নি, তেঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সৈয়দ ফুয়াদুস সালেহীন, হাজী তুলাজান বিবি গোলাপাড়াপন্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শেরা আলী, বড় ফেচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাছরিন জাহান শাহী, মশাজান কাদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. শামীমা বেগম, আশার কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. সাজিয়া খানম, মিনাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুর রহমান, কামিনীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা ইয়াছমিন বেগম, মশাজান কাদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. রোকশানা বেগম জায়গীরদার, ঐয়ারকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিপন সূত্রধর, খাগাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রেবী বেগম, খালিশা পাড়া সমছু মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. নাছরিন আক্তার সায়মা, হাজী নৌশা মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. রাবিয়া বেগম, জগন্নাথপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা উম্মে হানিফা মিলি, শাহার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ওলিউর রহমান সামি, এসএম আশা হক।

তারা সবাই উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে ৮ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- প্রভাকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আছমা বেগম, প্রভাকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কাসেম, মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফরিদা বেগম, আউদতপুর পূর্ব বুধরাইল আটঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমাতৃয যাহরা হাসনা, পূর্ব কাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুল হক, সুনাতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুবেল মিয়া, ঐয়ারকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমন মিয়া, আটঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হালিমা বেগম।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ সাধারণ ৩-৪ দিনের ছুটি, কেউ বা আবার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন বলে মাসখানেকের ছুটিও নিয়েছিলেন। কিন্তু ছুটি শেষ হলেও তারা আর বিদ্যালয়ে যোগদান করেননি। অনেকে আবার কোনো ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। কেন তারা পাঠদানে যোগদান করছেন না, কয়েক দফা চিঠি দিলেও তার কোনো জবাব পায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ১৬ জন শিক্ষক বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষক যুক্তরাজ্যে সপরিবারে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

এ বিষয়ে সালদীঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মকবুল হোসেন বলেন, আমার বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকের মধ্যে দুজন অনুপস্থিত। একজন এক মাসের ছুটি নিয়েছিলেন। অপরজন বিয়ের জন্য মৌখিক ৭ দিনের ছুটি নেন। শুনেছি তারা এখন বিদেশে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক বলেন উপজেলায় প্রায় ৩০-৩৫ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকা ছুটি না নিয়ে বিদেশে রয়েছেন। এ নিয়ে পাঠদানে সমস্য হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের লেখা পড়ার ক্ষতি হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র দাশ বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ২৪ জন শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার জন্য জেলা কর্মকর্তার নিকট একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এর আগে ৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহন লাল দাস বলেন, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা রুজু করে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশের কোনো উওর না পাওয়ায় তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাবেক এডিসি শচীন মৌলিক কারাগারে

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন শনিবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা

সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলন

শেষ দিনেও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে মতামত দেয়নি ৭ রাজনৈতিক দল

ইউরোপের লিগগুলোতে দল কমানোর প্রস্তাব ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তির

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

সুদ দিতে না পারায় বসতঘরে তালা, বারান্দায় রিকশাচালকের পরিবার

দেশ বাঁচাতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে : চরমোনাই পীর

১০

এএসপির বাসায় চাঁদাবাজি-ভাঙচুর, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১১

জেলের জালে বড় ইলিশ, ৯ হাজারে বিক্রি 

১২

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

১৩

আগামী সংসদ প্রথম তিন মাস ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব

১৪

ধরলার তীব্র ভাঙন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি

১৫

নেতা ও ভোটারের জবাবদিহিই হবে শ্রেষ্ঠ সংস্কার : মঈন খান

১৬

পাপের ফল ওদের ভোগ করতেই হবে : রাশেদ খান

১৭

ক্ষমা চাইলেন স্বাধীন খসরু 

১৮

স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : আমিনুল হক

১৯

ঢাকায় উদযাপিত হলো রাশিয়ান পতাকা দিবস

২০
X