বন্ধুর কাছ থেকে ৫০টি কলা চারা নিয়ে শুরু হয়ে মিরসরাইয়ের প্রবাস ফেরত নুরুল মোস্তফা (৫০) কলা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এখন তার বাগানে রয়েছে হাজারেরও বেশি কলা গাছ। দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে তেমন কিছুই করতে পারেননি এই প্রবাসী মোস্তফা। অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। তিন বছর আগে বাড়ির পাশের জায়গায় ৫০টি চারা দিয়ে শুরু করেছেন কলা চাষ। অন্যান্য চাষাবাদের পাশাপাশি কলা চাষ করে ভালো আয় করছেন তিনি।
নুরুল মোস্তফা মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের উত্তর ডোমখালী গ্রামের মৃত নুরুল আলমের পুত্র। সম্প্রতি নুরুল মোস্তফার কলা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পার্শ্ববর্তী খালপাড়ে প্রায় ২২ শতক জায়গার ওপর দৃষ্টিনন্দন সবুজ কলা বাগান। বাগানের বিভিন্ন গাছে ঝুলছে কলার কাঁদি। মোস্তফা ও তার ছেলে বাগানে পরিচর্যা করছেন। পাশের জমিতে ধান চাষ করেছেন। দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার বাগানে এসে সময় দেন তিনি। মাঝে মধ্যে কলাবাগানের পরিচর্যা করার জন্য শ্রমিক দিয়ে কাজ করান।
কলা বাগানে কথা হয় প্রবাস ফেরত চাষি নুরুল মোস্তফার সাথে। তিনি বলেন, জীবিকার সন্ধানে প্রবাসে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে ভালো কিছু করতে পারিনি। অসুস্থ হয়ে দেশে চলে আসি। দেশে এসে নিজের কিছু জমি ছিল এবং আরও কিছু জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছি। তিন বছর আগে আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ৫০টি দেশি কলার চারা লাগিয়ে ছোট্ট পরিসরে কলার বাগান শুরু করি। এরপর ক্রমান্বয়ে চাষের পরিধি বাড়তে থাকে। এখন ২২ শতক জায়গায় কলা চাষ রয়েছে। বাগানে রয়েছে ছোট বড় প্রায় এক হাজার কলা গাছ। চাষাবাদ ও কলা বিক্রির আয় দিয়ে দুই ছেলের পড়ালেখা চলছে।
তিনি আরও বলেন, একটি গাছ থেকে ৪ থেকে ৫টি চারা জন্মায়। এগুলো ধীরে ধীরে বড় গাছে পরিণত হয়। সেসব গাছে কলার ফলন হয়। আমার বাগানে উৎপাদিত কলা বাজারে নেওয়া প্রয়োজন হয় না। বাগান থেকে এসে পাইকাররা নিয়ে যায়। আত্মীয় স্বজন-পাড়া প্রতিবেশীকে দিয়ে আরও প্রায় ৫০ হাজার টাকার কলা বিক্রি করেছি। বাগানে যে পরিমাণ গাছ রয়েছে আরও এক লাখ টাকার কলা বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছি।
এতো কিছুর পরেও আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, কলা চাষে কৃষি অফিস থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি। শুনেছি বিভিন্ন ফলের বাগান করতে সরকারিভাবে ঋণ দেওয়া হয়, তাও কপালে জোটেনি।
জানা গেছে, বাজারের কলায় যখন কেমিক্যাল ও ফরমালিনে ভরপুর, তখন নুরুল মোস্তফার বাগানে উৎপাদিত কেমিক্যালমুক্ত কলার বেশ চাহিদা রয়েছে। যদিও তিনি পাইকারিভাবে প্রতি পিস কলা ৫ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি করে থাকেন। পাইকাররা তার কাছ থেকে কিনে প্রতি পিস কলা ১০ থেকে ১২ টাকায় খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন।
বদিউল আলম স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, প্রবাস ফেরত নুরুল মোস্তফা এখন ধান চাষ থেকে কলা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। পারিবারিক ও আত্মীয়স্বজনের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে ভালো টাকা আয় করছেন। এলাকায় উনার বাগানে উৎপাদিত কলার বেশ চাহিদা রয়েছে। আশপাশের অনেকে উনার দেখাদেখি কলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
সোনালি স্বপ্ন পাঠাশালার পরিচালক মঈনুল হোসেন টিপু কালবেলাকে বলেন, যখন বাজারে বিভিন্ন ফলে কেমিক্যাল ও ফরমালিনে ভরপুর, ঠিক তখনই তখন নুরুল মোস্তফা কেমিকেলমুক্ত কলা চাষ করেছেন। তার এ কেমিক্যালমুক্ত কলার বাজারে অনেক চাহিদা রয়েছে। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকে বেকার যুবক কলা চাষে আগ্রহী উঠছেন বলেও জানান তিনি।
যোগাযোগ করা হলে মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় কালবেলাকে বলেন, নুরুল মোস্তফার কলা বাগানের কথা শুনেছি। তবে এখনো বাগানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে কৃষক নুরুল মোস্তফা যখন থেকে কলা চাষ শুরু করেছেন আমাদেরকে জানায়নি, তাহলে কি করে তাকে সহযোগিতা করব।
তিনি আরও বলেন, এবার মিরসরাইয়ে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে কলা আবাদ হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে বেশিরভাগ চাষ হয়েছে।
মন্তব্য করুন