কুড়িগ্রামে কাশবনের শুভ্রতায় ছেয়ে গেছে চর ও দ্বীপ চরগুলো। ধরলা তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জন্ম নেওয়া কাশবন প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরও অপরূপ করে তুলেছে। শরতের অবসর দিনে শহরের যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে চোখ জুড়াতে মানুষ খুঁজে নিচ্ছে কাশফুলের শুভ্রতা। কাশফুল শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নয় বর্তমানে চরাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকায় অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে জানান চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে জেগে ওঠা নতুন ও পুরাতন চর ও দ্বীপ চরগুলোর পতিত জমিতে দেখা দিয়েছে কাশবন। একোরের পর একোর জমিতে দোল খাচ্ছে কাশফুল। শরতের সাদা মেঘের ভেলা আর ধু ধু বালু চরে কাশবনের উপস্থিতি সবারই মনে দোলা দেয়। কাশবন দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে নানান বয়সী মানুষের সমাগম ঘটে। এই কাশবনগুলো শুধু প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে প্রিয় নয়, এটি এখন চরবাসীর জন্য আশীর্বাদ। সাংসারিক নানান কাজে কাশবনের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জেলার বাইরেও কাশবনের ব্যাপক চাহিদা। বিশেষ করে পানের বরজের জন্য রাজশাহী ও বরিশাল অঞ্চলে পান চাষিদের কাছে কাশবনের প্রচুর চাহিদা। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে গো-খাদ্য সংকট, ঘরের বেড়া তৈরিতে কাশ ছনের প্রয়োজন হয়।
কথা হয় মোল্লার হাট চরের মতিয়ার রহমানের সাথে। তিনি কালবেলাকে বলেন, কাশ বনের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। একসময় আমরা কাঁচা কাশবনগুলো কেটে শুধু গরু মহিষের খাদ্যের জন্য সংগ্রহ করতাম। এখন বিভিন্ন কাজে কাশবনের ব্যবহার হচ্ছে। নৌকায় করে দূর-দূরান্তে কাশবন কিনে নিয়ে যাচ্ছে পান চাষিরা। পাইকারি দামে প্রতি হাজার কাশবনের আটি ৭-৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বছরই আমরা চরবাসী এই কাশবন থেকে বেশ লাভবান হচ্ছি। এক বিঘা পতিত জমিতে খরচ ছাড়াই ১২-১৫ হাজার টাকার কাশবন বিক্রি করে থাকি।
মশালের চরের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বছর নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছি। এ বছর ওই জমিতে বালু জমে চর জেগেছে। সেই পতিত জমিতে প্রায় ৫ বিঘা জায়গাজুড়ে হয়েছে কাশবন। এতে কোন খরচ নাই। সাধারণত বন্যা ও বন্যা পরবর্তী সময়ে জেগে ওঠা চরগুলোর পতিত জমিতে কাশবন জন্মে। মাত্র দুই-তিন মাস একটু গরু মহিষের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলে ভালো কাশবন পাওয়া যায়। আশা করছি ৫০-৬০ হাজার টাকার কাশবন বিক্রি করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরই বন্যার সময় চারণভূমি ডুবে যায়। এ সময় গো খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। আমরা ধান খড়ের পাশাপাশি কাশবন কেটে গো খাদ্যের অভাব পূরণ করে থাকি।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চল রয়েছে। এ ছাড়া জেলার ১৬টি নদ-নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলগুলোতে খণ্ড খণ্ডভাবে সহস্রাধিক কাশবন রয়েছে। বর্তমানে কাশবন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করছে তা নয়, পাশাপাশি কাশবন বিক্রি করে কৃষকরা ভালো আয়ও করছেন।
মন্তব্য করুন