অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাড়ির ছাদেই মুক্তা চাষ

অভয়নগরে বাড়ির ছাদে মুক্তা চাষ। ছবি : কালবেলা
অভয়নগরে বাড়ির ছাদে মুক্তা চাষ। ছবি : কালবেলা

যশোরের অভয়নগর উপজেলার এক্তারপুর গ্রামের মো. আব্দুর রহমান নামে এক কলেজছাত্র স্বাদু পানিতে মুক্তা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। পরীক্ষামূলক প্রকল্প হলেও এরইমধ্যে মুক্তা আহরণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন তিনি। তার সাফল্যে অন্য বেকার যুবকরাও ঝুঁকছেন এ পেশায়।

আব্দুর রহমান এক্তারপুর গ্রামের কবির হেসেনের ছেলে। তিনি নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

জানা গেছে, করোনাকালে ইউটিউবে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি দেখে তিনি উৎসাহিত হন। এ আর এগ্রো ফার্মিং মুক্তা চাষ ট্রেনিং সেন্টার খুলে অনেক বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করে দিয়েছেন ওই যুবক।

আব্দুর রহমান বলেন, ২০২০ সালে করোনার সময়ে বাড়িতে পড়াশোনার পাশাপাশি আমি ইউটিউবে ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি দেখে উদ্বুদ্ধ হই। এরপর এটা নিয়ে কিছুদিন গবেষণা করি। প্রথম দিকে দুটি ঝিনুক সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে সাফল্য পেয়ে আমি পরবর্তীতে ৫শ ঝিনুক নিয়ে কাজ শুরু করি। ৫শ ঝিনুক থেকে এখন তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজারে। ৩ মাস আগে ঝিনুকের পাশাপাশি একই হাউস কাজে লাগিয়ে আরও কিছু করার চিন্তা থেকে ছাদের জলাশয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ছাড়েন রঙিন মাছ। এক্ষেত্রেও দেখা দেয় বড় ধরনের আর্থিক আয়ের সম্ভাবনা।

এখন প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকার মুক্তা বিক্রি করেন তরুণ এই উদ্যোক্তা। সরেজমিনে দেখা যায়, তার বাড়ির ছাদে ২০ ফুট ও ১০ ফুট একটি পানির হাউস আছে। পানিতে ঝিনুকের পাশাপাশি ছোট ছোট রঙিন মাছ খেলা করতে দেখা যায়। ঝিনুক থেকে কীভাবে মুক্তা চাষ করা হয় জানতে চাইলে আব্দুর রহমান জানান, মুক্তা এমন একটি রত্ন, যা পেতে ঝিনুককে যত্ন করতে হয়। মুক্তা চাষের জন্য প্রয়োজন কিছু সরঞ্জাম। যেমন- ঝিনুক অপারেশনের কিটবক্স, দুই ধরনের নেট বক্স ও ইমেজ তৈরির জন্য কিছু যন্ত্রপাতি। সাধারণত ১০ থেকে ১২ মাস বয়সে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ইমেজটি স্থাপন করা হয় ঝিনুকের পেটে। এরপর দুই থেকে আড়াই ফুট পানির নিচে ডুবিয়ে রাখা হয় ঝিনুকগুলোকে। এভাবে ২১ থেকে ২৮ দিন রাখার পর সেগুলোকে উন্মুক্ত করা হয় ছাদ পুকুরে। এরপর ১০ মাসের মধ্যে স্থাপিত ইমেজটি মুক্তায় পরিণত হয়। সবশেষে পুকুর থেকে ঝিনুক তুলে আহরণ করা হয় মুক্তা।

ঝিনুক সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রতিটি মুক্তা আহরণ পর্যন্ত খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। ঝিনুক অস্ত্রোপচার ঘরে বসেই করা যায়। খুব অল্প খরচে সরঞ্জাম কেনা যায়। ধৈর্য ধরলে ভালো মুক্তা মেলে, লাভ পাওয়া যায়। মুক্তা চাষের বিশেষ দিক- ঝিনুককে বাড়তি খাবার দিতে হয় না। ঝিনুক নিজে থেকেই খাবার নিয়ে নেয়। উল্টো পুকুরের পানি মাছ চাষের জন্য উপযোগী করে তোলে ঝিনুক। মাঝে মধ্যে পানির পিএইচ ও ঝিনুকের আবরণ পড়ছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়। পরে ওই ঝিনুক থেকেই মুক্তা তৈরি হয়।

আব্দুর রহমান ২০২২ সালে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া তিনি অভিজ্ঞতা অর্জনে নওগাঁ ও কোটচাঁদপুরে কয়েকটি ফার্ম পরিদর্শন করেছেন।

আব্দুর রহমান আরও জানান, প্রতি পিস মুক্তা বাংলাদেশের আড়ং নামে একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে এরইমধ্যে তিনি ২ লাখ টাকা আয় করেছেন। এ ছাড়া তৈরি করা নিউক্লিয়াস ১০ টাকা ও সংগ্রহ করা ঝিনুক ৫ টাকা করে বিক্রি করেন। বিক্রি করা মুক্তা তৈরি করতে তার সর্বসাকুল্যে ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার এ মুক্তা চাষ প্রকল্পের গ্রামের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও হয়েছে। বর্তমানে তার প্রকল্পে ঝিনুক সংগ্রহের কাজে ৭ থেকে ৮ জন বেকার যুবক কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়া মুক্তা তৈরির কাজে তার মা-বাবাসহ ৭ থেকে ৮ জন লোক সহযোগিতা করে থাকেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুর রহমানের বাবা কবির হোসেন জানান, ছেলের ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ডে প্রথম থেকে সহযোগিতা করেছি, এখন আলহামদুলিল্লাহ তার সুফল ভোগ করছি। বাড়ির ছাদে রঙিন মাছের সঙ্গে কীভাবে মুক্তা চাষ হয় সে বিষয়টি দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থী ছুটে আসেন।

খুলনা দৌলতপুর থেকে প্রজেক্ট দেখতে আসা আমিনুর রহমান বলেন, বেকার যুবকরা এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, একজন ছাত্র পড়াশোনার পাশাপাশি ঝিনুক চাষ করে মুক্তা তৈরি করছে। সেই সঙ্গে রঙিন বাহারি মাছের চাষ করেও সফলতা পেয়েছে। পুকুরে মুক্তা চাষে ঝুঁকি কম ও লাভজনক। মানসম্মত মুক্তা চাষ করতে পারলে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। বেকার যুবকরা এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হতে পারে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যোক্তাদের এমন নতুন নতুন উদ্ভাবনী আমরা প্রত্যাশা করি। উপজেলা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে আমরা তার পাশে থেকে তাকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে যাব। এ ধরনের কার্যক্রমে আমরা পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেবিন ক্রুদের আসল কাজ কী

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের বড় সুখবর দিল সরকার

জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে এবার আইপিএলে কাজ করা অ্যানালিস্ট

আমরা লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে : নেতানিয়াহু

৩ প্যাকেট কাঁচা নুডলস খেয়ে ১৩ বছরের কিশোরের করুণ পরিণতি

তিস্তার বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন ভাসছে অনিশ্চয়তার অথৈ জলে

ব্যাংকিং টিপস / ব্যাংকের সুদের হার ও চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকুন

শতভাগ লুটপাটমুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী : ড. মোবারক

মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে এসে মারা গেলেন ছেলেও

১০

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

১১

সিঙ্গারে চাকরির সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

১২

মেসিহীন মায়ামিকে বাঁচাল রদ্রিগেজের দুর্দান্ত গোল

১৩

গাজায় যেভাবে দুর্ভিক্ষ নেমে এলো

১৪

লেভান্তের মাঠে বার্সার রোমাঞ্চকর জয়

১৫

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

১৬

আকিজ গ্রুপে চাকরি, বেতন ছাড়াও থাকবে নানা সুবিধা 

১৭

বাগেরহাটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

১৮

যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করছে ভারত

১৯

২৪ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২০
X