পটুয়াখালীর দুমকিতে ৮ মাস পার না হতেই এলজিইডির নির্মাণকৃত সড়ক বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। এক কিলোমিটার সড়কের একাধিক স্থান দেবে গেছে। কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের। এমনকি ১২ ফুট প্রশস্ত সড়কের প্রায় ৮ ফুট ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্তের। এতে ছোট আকৃতির যানও অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। যে কোনো সময়ে পুরো সড়কটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে নির্মিত সড়কটিতে অবাধে মালামাল ভর্তি মাহেন্দ্রাসহ ভারী যানবাহনে ইট, বালু ও মাটি পরিবহনে এমন হাল হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বোর্ড অফিস বাজারে পশ্চিম পাড়ে লেবুখালী বগা আরএইচডি সড়ক থেকে গাবতলী বাজার ভায়া ছালামপুর সিনিয়র মাদ্রাসা (আইডি নং ৫৭৮৯৬৪০৪১) সড়কটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কার্পেটিং কাজ সম্পন্ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। রাস্তার কাজ শুরুতেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালীর মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ছিল স্থানীয়দের। কিন্ত এলজিইডির সরেজমিন সুপারভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (এসও) যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়েই টেন্ডারের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে চলে যান। ওই সময়ে পাশের মুরাদিয়া ইউনিয়নে একই এসওর তত্ত্বাবধানে অনুরূপ আরএকটি সড়কের নির্মাণকাজের মালামাল পরিবহনে সদ্য নির্মিত এ কার্পেটিং সড়ক ব্যবহারের কারণেই এমন বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে দুমকি উপজেলা প্রকৌশল বিভাগে বারবার অভিযোগ করেও কোনো সুফল আসেনি। উপজেলা প্রকৌশলী অবশ্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের জামাতের টাকায় সড়কটিকে মেরামতে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করলেও তদারকির দায়িত্বরত কর্মকর্তার (এসও) রহস্যজনক ভূমিকার কারণে থমকে গেছে। আরও এর কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সুবিধাভোগী বাসিন্দারা দুর্ভোগের শিকার হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তালুকদার এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জুয়েল তালুকদার বলেন, টেন্ডারের কোটেশন অনুসারেই কাজটি করতে হয়েছে। তবে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী যে নিম্নমানের ছিল তার মোটেই সঠিক নেয়। মালামালের বর্ধিত মূল্য বিবেচনায় অফিস কর্মকর্তাদের সাজেশন ও পছন্দের মালামাল এনে কাজটি করেছিলাম। কিন্তু নুতন কার্পেটিং সড়কে ভারী মাহেন্দ্রা ও ট্রাকে মালামাল পরিবহনে রাস্তা ভেঙে ফেলার খেসারত আমি কেন দেব।
তিনি আরও বলেন, স্লুইস সংলগ্ন রাস্তার নিচে সুরঙ্গ হয়ে পানি ওঠানামা করার ফলে একসময় প্রাকৃতিকভাবে ভেঙেছে। এটা ডিপার্টমেন্টের বিষয়, এখানে ঠিকাদারকে দায়ী করার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।
টেন্ডারের দায়িত্বরত এসও মো. সরাফত উল্লাহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মেরামতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ভিন্ন কোনো প্রকল্প দিয়ে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। কন্ট্রাক্টরের জামানত বাজেয়াপ্ত প্রশ্ন এড়িয়ে বলেন, প্রকৃতিগত ক্ষয়ক্ষতির জন্য ঠিকাদারকে দায়ী করা যাবে না। বরং ভিন্নভাবে করাই ভালো হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক বলেন, প্রতিটি কাজের বিপরীতে এক বছর ঠিকাদারের জামানত রাখার বিধান আছে। এর মধ্যে কাজের মান খারাপ হলে জামাতের টাকায় মেরামত করা হয়। উল্লিখিত সড়কটি যেহেতু বছর পার হয়নি, সেহেতু জামানত তুলে নিতে পারার কথা নয়। তা ছাড়া এসওর সুপারিশও করার কথা নয়। এটা হয়ে থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন