কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মৌখিক পরীক্ষায় পাসের জন্য পরীক্ষার্থীদের থেকে দু’দফা চাঁদা আদায়

চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থী ও কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা। ছবি : কালবেলা
চাঁদা আদায়ের প্রতিবাদে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থী ও কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা। ছবি : কালবেলা

খুলনার কয়রা উপজেলার কয়রা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে কামিল পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে মৌখিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাইয়ে দিতে দুই দফা টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৌখিক পরীক্ষায় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত বহিরাগত ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষকদের খু‌শি কর‌তে দেওয়ার কথা বলে পরীক্ষার্থীদের থেকে এ টাকা নেওয়া হয়।

সরেজমিন শনিবার পরীক্ষা কেন্দ্রে দেখা যায়, কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক বাবুল আক্তার ও মো. ওলিউল্লাহ কামিল পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে মাথাপিছু ৩০০ করে টাকা নিচ্ছেন। টাকা না দিলে তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধা দিচ্ছেন। একপর্যায়ে পরীক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক গোপাল চন্দ্র, অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম ও কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মালেকের সাথে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে পুলিশ এসে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মোহসিন হো‌সেন এসে টাকা নেওয়া বন্ধ করেন। তবে তিনি চলে যাওয়ার পরে ফের টাকা নেওয়া শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে পরীক্ষা চলাকালীন কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মাসুদুর রহমানের নির্দেশে অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম অ্যাসাইনমেন্টের খাতায় স্বাক্ষর ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা নেন।

কামিল পরীক্ষার্থী আরাফাত ও একরামুল বলেন, আমরা কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। আমাদের মাদ্রাসা থেকে কোনো প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি। কয়রা সরকারি মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ৫০০ টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হয়েছে। পরবর্তীতে পরীক্ষা চলাকালে মৌখিক পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্টের খাতা স্বাক্ষর বাবদ কলেজ কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আরও ৫০০ টাকা নিয়েছে। তখন অবশেষে মৌখিক পরীক্ষার দিন কলেজ কর্তৃপক্ষ ফের ৩০০ টাকা করে নিতে চাইলে প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদের ফলে কিছু পরীক্ষার্থীর নিকট থেকে টাকা না নিলেও অধিকাংশদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলেন, মৌখিক পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্টের খাতা বাবদ অবৈধভাবে দুই দফায় আমাদের থেকে ৮০০ টাকা নিয়েছে। আমরা ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি। নীরবে সব মেনে নিয়েছি।

ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. রুহুল কুদ্দুস ও খুলনা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মো. গোলাম মোস্তফা মৌখিক পরীক্ষায় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনিত বহিরাগত পরীক্ষক ছিলেন।

কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান বলেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা পরিচালনা করছি। প্রবেশপত্র বাবদ টাকা নিয়ে পরীক্ষার যাবতীয় খরচ মেটানো হচ্ছে। মৌখিক পরীক্ষায় বহিরাগত পরীক্ষকদের কিছু দেওয়ার জন্য মাদ্রাসা থেকে বলা হয়। না দিলে নাকি ভালো নম্বর দেন না। এ জন্য মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাসুদ পরীক্ষা চলাকালীন টাকা তুলেছিল। তবে সেই টাকা থেকে মৌখিক পরীক্ষার খরচ দেওয়ার কথা থাকলেও এক টাকাও দেননি। অবশেষে বাধ্য হয়ে খরচ মেটাতে ৩০০ টাকা করে উত্তোলন চেষ্টা করি। তবে বিশৃঙ্খলা হলে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেই। আর যাদের থেকে নেওয়া হয়েছিল তাদের টাকা ফেরত দিব।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে আমার ঢোকা নিষেধ। কি হচ্ছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানতে পারছি না। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক যোগসাজশে অনিয়ম করতেছেন। আমাকে বাদ দিয়ে বাইরের লোক দিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন কন্ট্রোলার। প্রবেশপত্র বিতরণের ক্ষমতাও আমাদের দেয়া হয়নি। কয়রা কলেজের অধ্যক্ষকে দিয়ে প্রবেশপত্র বিতরণ করানো হয়। সব বিষয় নিয়ে ভিসির কাছে লিখিত অভিযোগ করব।

কয়রা উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হো‌সেন ব‌লেন, টাকা নেওয়ার বিষ‌য়ে জান‌তে পে‌রে প্রতি‌নি‌ধি পাঠি‌য়ে‌ছিলাম। তাৎক্ষ‌ণিক টাকা উত্তোলন বন্ধ ক‌রেন। পরে আইনানুগ ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আক্তারুজ্জামান বলেন, মৌখিক পরীক্ষার প্রত্যেকটি পরীক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের মনোনীত বহিরাগত পরীক্ষকদের সম্মানী দেন। মৌখিক পরীক্ষার জন্য কোনো ধরনের টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। লি‌খিত অভিযোগ পে‌লে তদন্তসা‌পে‌ক্ষে ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।

তিনি আরও বলেন, ওই মাদ্রাসায় দুটি গ্রুপিং রয়েছে। এজন্য পরীক্ষা পরিচালনার জন্য সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল মালেককে সহযোগিতার কথা বলি। প্রবেশপত্র মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ডাউনলোড করবেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ কিভাবে পাসওয়ার্ড পেয়েছে এটা আমার জানা নেই। কলেজ ও মাদ্রাসার মধ্যে দ্বন্দ্ব হচ্ছে এই খবরে তদন্তের জন্য আমরা হাই পাওয়ারের কমিটি পাঠানোর ব্যবস্থা করতেছি। ওখানের ফাজিল ও কামিল পরীক্ষার কেন্দ্র বাতিলের সুপারিশ করেছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জ্বালানি খাতে দুর্নীতির তালিকা প্রকাশের আহ্বান অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট ওয়েবসাইটে সাইবার হামলা

চবিতে জাতীয় ছায়া আইনসভার সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত

শতবর্ষ উদযাপন স্কুল টুর্নামেন্টে সাজিদ ও সাফায়েত চ্যাম্পিয়ন

জাল সনদে চাকরি / ২ মাদ্রাসা শিক্ষকের এমপিও বাতিল

সেমিনারে বক্তারা / মাতৃমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ এক্লাম্পসিয়া

জনগণ দুর্নীতিবাজ উপদেষ্টাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায় না: আমিনুল হক

জুলাই আন্দোলনে হামলা / পরস্পরকে চাঁদাবাজ বললেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা

যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া সম্পদ জব্দের প্রথম পদক্ষেপে টিআইবির সাধুবাদ

থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরবে কয়েকদিন, মঙ্গলবার থেকে ভারি বৃষ্টি

১০

মানুষের বাস্তব সংকট সমাধানকে গুরুত্ব দিতে হবে : জোনায়েদ সাকি

১১

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট নিয়ে হুলস্থুল, ৮ মিনিটেই শেষ চার ক্যাটাগরি

১২

শহীদ হাসানের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত

১৩

ভর্তি পরীক্ষা ৩১ মে / জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সাড়ে ৫ লাখ পরীক্ষার্থী

১৪

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন, জানালেন প্রেস সচিব

১৫

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি / ‘অটোপাস’ অসম্ভব, ইনকোর্স নিয়ে চলছে ‘প্রহসন’

১৬

রোগী সেজে হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অতঃপর...

১৭

হামজাদের কাঁদিয়ে আট বছর পর প্রিমিয়ার লিগে সান্ডারল্যান্ড

১৮

ছাত্রদল নেতাসহ ইমো হ্যাকার চক্রের তিন সদস্য আটক

১৯

অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে আমাদের কাজ করে যেতে হবে : নয়ন

২০
X