ঝিনাইদহে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এক মামলায় বাবা-মায়ের অপরাধে হাজতবাসী হয়েছে ৪ বছরের এক শিশু। সোমবার (২৬ জুন) ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মা জামিন নিতে এলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সময় শিশুটি কান্না করায় আইনজীবীর আবেদনে শিশুটিকে মায়ের সঙ্গে জেলহাজতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের এক মামলায় বাবা কালীগঞ্জের মিন্টু মিয়া (৪০) ১৫ দিন ধরে কারাগারে। মা জেসমিন আক্তার (২৮) একই মামলার আসামি হয়ে সোমবার আদালতে জামিন নিতে এলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কোর্ট পুলিশ যখন জেসমিনকে কাঠগড়া থেকে হাজতে নিয়ে যাচ্ছে তখন তার ৪ বছরের মেয়ে শিশুটি ননদ কবিতার কোলে ছিল। মাকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে দেখে শিশুটি মায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করে। অনেক চেষ্টার পরও যখন শিশুটির কান্না থামানো যায়নি তখন জেসমিনের আইনজীবীর আবেদনে শিশুটিকে মায়ের সঙ্গে জেলহাজতে থাকার অনুমতি দেয়। তারপর ওই শিশুটি এখন মায়ের সঙ্গে ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঘটনার তারিখ উল্লেখ করে ১৫ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ থানায় ভাটপাড়া গ্রামের জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে একই গ্রামের নায়েব আলীর (৩৫) বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে আসামি নায়েব আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় ওই বছরের ৩০ অক্টোবর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর চলতি বছরের ৩ এপ্রিল আদালত আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।
মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে নায়েব আলী গত ১৭ এপ্রিল ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী জেসমিন আক্তার এবং তার স্বামী মিন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে ১৭/৩০ ধারায় পাল্টা মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলাটি আমলে নিয়ে ওইদিনই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
জেসমিন আক্তারের আইনজীবী খন্দকার লিয়াকত জানান, ১১ জুন কালীগঞ্জ থানা পুলিশ জেসমিন আক্তারের স্বামী মিন্টু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর সোমবার ২৬ জুন জেসমিনকে আদালতে হাজির করে স্বামী-স্ত্রীর জামিন আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেসমিন আক্তারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জেসমিনের আইনজীবী আরও বলেন, জেসমিন ধর্ষিতা হলেও দেরিতে মেডিকেল করার কারণে প্রমাণ মেলেনি। ফলে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। যে কারণে আজ জেসমিন ও তার স্বামী পাল্টা মামলার শিকার হয়ে কারাগারে। এ জন্য তাদের ৪ বছরের শিশুটিরও মায়ের সঙ্গে কারাগারে থাকতে হচ্ছে।
জেসমিনের ননদ কবিতা খাতুন জানান, তার ভাবি জেসমিনের করা মামলাটি খারিজের পর তার ভাই ও ভাবির নামে যে মামলা হয়েছে সেটা তাদের জানা ছিল না। আর মামলা দায়েরের দিনই আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এসব বিষয় তার ভাই না জানার কারণে আগে থেকে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেনি, তাই তার ভাই গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া তার ভাবি আইনজীবীর পরামর্শে স্বেচ্ছায় হাজির হয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশারত হোসেন বলেন, আসামি জেসমিন আক্তার ও তার স্বামী মিন্টু মিয়া নায়েব আলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল। যে কারণে তার মানহানি ঘটেছে এবং তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে বিচার চেয়ে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আসামির সঙ্গে অল্প বয়সের বাচ্চা থাকায় আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশুটিকেও কারাগারে রাখার আবেদন করেছেন।
ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের পিপি অ্যাড. বজলুর রহমান জানান, কোনো নারী কারাগারে গেলে তার কোলে যদি শিশু থাকে তাহলে ওই শিশু মায়ের সঙ্গেই থাকবে এটাই নিয়ম। যে কারণে আসামি জেসমিনের সঙ্গে তার শিশুটি কারাগারে রয়েছে।
মন্তব্য করুন