আতাউর রহমান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০২:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিলুপ্তির পথে মহৌষধি তুলসী

তুলসি গাছ। ছবি : কালবেলা
তুলসি গাছ। ছবি : কালবেলা

এক সময়ে চিকিৎসার প্রয়োজনে গ্রামবাংলায় গুরুত্ব ছিল নানা ঔষধি গাছের। সময়ের ব্যবধানে আর বিজ্ঞানের উৎকর্ষের ছোঁয়ার এসব ঔষধি গাছের কদর কমেছে। এসব ঔষধি গাছের মধ্যে অন্যতম নানা গুণে সমৃদ্ধ মহৌষধি গাছ তুলসী কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় আজ অবহেলার ফলে বিলুপ্তির পথে। রোগবালাই নিরাময়ে প্রাচীনকাল থেকেই এই তুলসীগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলার কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ছাড়া তুলসী গাছ আগের মতো এখন আর দেখা যায় না। কোনো এক সময় এই জনপদের বনবাদাড়ে, রাস্তার ধারে ও বসতবাড়ির আঙিনায় দেখা মিলতো তুলসী গাছের। সময়ের পরিক্রমায় আর এলোপ্যাথি চিকিৎসার উৎকর্ষে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে তুলসীসহ নানা ঔষধি গাছ। গ্রাম-গঞ্জে আগের মতো ঔষধি গাছ আর লাগানো ও পরিচর্যা করতেও এখন আর তেমন দেখা যায় না।

উপজেলার কান্দুঘর গ্রামের হেকিম (কবিরাজ) আবদুল হান্নান বলেন, আমার দাদা এক সময় গ্রামের আনাচে-কানাচে জন্মানো ঔষধি গাছ দিয়ে মানুষের নানা রোগ নিরাময় করতেন। আমার বাবাও এ পেশায় জীবন পার করেছেন। বংশ পরম্পরায় আমিও এই পেশাতেই আছি। তবে এখন আর আগের মতো সহজলভ্য নয় ঔষধি গাছ। তা ছাড়া মানুষের এখন এলোপ্যাথি চিকিৎসার প্রতি আগ্রহী বেশি। এতে করেও বনাজী গাছগাছালি অবহেলিত হয়ে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এলোপ্যাথি চিকিৎসার অগ্রগতি ও হারবাল চিকিৎসা প্রসারিত না হওয়ায় দিন দিন তুলসীসহ আরও অনেক ঔষধী গাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, মহৌষধি গাছ তুলসী একটি ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ২/৩ ফুট উঁচু চিরহরিৎ প্রজাতির গুল্ম। এটি একটি ঔষধিগাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী গাছ লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি সুগন্ধী উদ্ভিদ। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসেবে সমাদৃত। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তুলসীকে ‘সীতাস্বরূপা’, স্কন্দপুরাণে ‘লক্ষীস্বরূপা’, চর্কসংহিতায় ‘বিষ্ণুপ্রিয়া’, ঋগবেদে ‘কল্যাণী’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটি নানা রোগ নিরাময়ে আদিকাল থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে।

ইউনানি চিকিৎসকদের তথ্য মতে, তুলসীর রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। এর পাতা, ফুল ও ফলের একটি ঝাঁঝালো গন্ধ আছে। সর্দি ও দীর্ঘদিনের খুসখুসে কাশিতে কিছু তুলসী পাতা গরম পানিতে জ্বাল দিয়ে নির্যাস বের করে নিয়ে সামান্য আদা ও মধু দিয়ে খেলে সর্দি-কাশি ও জ্বর ভালো হয়। তুলসীর এই নির্যাস খেতে হবে পাঁচ থেকে সাত দিন তিন বেলা করে। শিশুর সর্দি-কাশিতে চার থেকে ১০ ফোঁটা তুলসী পাতার রসের সঙ্গে তিন থেকে পাঁচ ফোঁটা মধু মিশিয়ে তিন বেলা খাওয়ালে সর্দি-কাশি দুই তিন দিনের মধ্যে ভালো হবে। ব্রংকাইটিস ও ডাইরিয়াতে ভালো ফল দেয় তুলসী। গরমে কেউ না ঘামলে ঘাম ঝরাতে ভূমিকা রাখে তুলসী। এসব ক্ষেত্রে তুলসীর পাতা প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচটি খেতে হবে কয়েক সপ্তাহ ধরে।

মহৌষধি তুলসীর রয়েছে আরও নানা গুণ। সাধারণ জ্বর, ঠান্ডা ও কাশির তীব্রতা কমাতে তুলসি পাতার রসের জুড়ি নেই। মুখের দাগের আধিক্য কমাতে তুলসির রস মাখলে আস্তে আস্তে সেই দাগের পরিমাণ কমে আসে। তুলসি পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেলে নানান ধরনের রোগের উপশম সম্ভব। তুলসি গাছের শিকড় খেলে যৌন দুর্বলতা সেরে যায়। সকালে খালিপেটে পানির সাথে তুলসির রস মিশিয়ে খেলে হৃদরোগের উপকার পাওয়া যায়।

এ ছাড়াও ত্বকের ব্রণ সমস্যায় ও ব্রণের দাগের সমস্যায় নিয়মিত তুলসি পাতা বেটে মুখে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললেই ব্রণ ও ব্রণের দাগ সেরে যায়। দাদের সমস্যায় তুলসির রস মেখে দিলে ব্যথা উপশম হয়। নিয়মিত তুলসি পাতার রস খেলে মাংসপেশি ও হাড় ভালো থাকে। নিয়মিত তুলসি পাতার রস খালি বা পানির সাথে মিশিয়ে খেলে রক্তের বিষাক্ত উপাদান হ্রাস পায়। গায়ের কোনো অংশ পুড়ে গেলে সে স্থানে তুলসির রস লাগালে আরাম বোধ হয় ও ইনফেকশন রোধ করে। নিয়মিত তুলসির রস সেবনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ঘরের মধ্যে বিষাক্ত বাতাস থাকলে তুলসি গাছ তা সহজেই দূর করে দেয়। নিয়মিত তুলসির সেবন কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তুলসি রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়তে দেয় না।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি মেডিকেল অফিসার সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, তুলসী একটি মহামূল্যবান ঔষধি গাছ। এটি দিয়ে মানবদেহের নানা কঠিন ও জটিল রোগের চিকিৎসা করা হয়। ইউনানি ঔষধ তৈরি করতে এই গাছটির বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের কাছে অবহেলিত এই তুলসীগাছ বিলুপ্ত হতে চলেছে। এই মহামূল্যবান ঔষধি গাছটি টিকিয়ে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় তুলসীগাছ লাগানো উচিৎ। আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেষজ বাগানে এই ঔষধি গাছটি সংগ্রহীত আছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

গাজা সীমান্তে ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করল মিসর

জাজিরা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অনিয়মে জর্জরিত স্বাস্থ্যসেবা

ডেজার সভাপতি প্রকৌশলী রুহুল আলম, সম্পাদক প্রকৌশলী চুন্নু

নানা আয়োজনে গাকৃবিতে মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন

১০

বিপিএলের ফিক্সিং ইস্যুতে সতর্ক অবস্থানে তামিম

১১

রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু বুধবার

১২

এবার সিলেটের উৎমাছড়া থেকে ২ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ

১৩

জমি রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়েরের শেষ সময় সেপ্টেম্বরে

১৪

পায়ের ফাঁকে বালিশ দিয়ে ঘুমালে কী হয়, জানেন কি?

১৫

জামায়াতের মুখে সংস্কার, হাস্যকর বিষয় : সোহেল

১৬

লবণ বেশি খেলে কী ঘটে শরীরে? জানালেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ

১৭

গণতন্ত্রকামী দলগুলোর দূরত্ব তৈরি হলে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে : তারেক রহমান

১৮

বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার

১৯

স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ক্ষমা চাইতে হবে : এনসিপি নেতা ডা. জাহিদুল

২০
X