বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবনবেষ্টিত দুর্গম পথ খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন। ইউনিয়নটির প্রায় ৪০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ইউনিয়নটির অভ্যন্তরীণ রাস্তা চলাচলের অনুপযুক্ত। সেখানে চলে না অ্যাম্বুলেন্স কিংবা ভ্যান-ইজিবাইক। কেউ অসুস্থ হলে রোগী আনা নেওয়ার মাধ্যম নৌকা কিংবা মোটরসাইকেল। আর এমন দুর্গম এলাকার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র জনবলের অভাবে গত ছয় মাস ধরে তালা ঝুলছে। ফলে ওই এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে গর্ভবতীদের সমস্যা চরমে পৌঁছেছে। সরেজমিন দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতে মোটরসাইকেল ও নৌকা ছাড়া তেমন কোনো পরিবহন চলাচল সম্ভব না। অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা নিতে যেতে হয় ৩০ কিলোমিটার দূরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ইউনিয়নটিতে অবস্থিত দ্বিতলা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ক্লিনিকে তালা ঝুলছে। কক্ষগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় আবর্জনার স্তূপে ভরা।
এলাকার মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্লিনিকটি থেকে একসময়ে তারা বিভিন্ন ওষুধ ফ্রি পাওয়ার পাশাপাশি সেবা পেত। তবে প্রায় দুই বছর ধরে ক্লিনিকটিতে উপসহকারী মেডিকেল অফিসার নেই। একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফডব্লিউভি) ছিলেন। তিনিও গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে অন্যত্র চলে গেছেন। তখন থেকে ক্লিনিকটি সম্পূর্ণ বন্ধ। কোনো সেবা দেওয়া হয় না।
স্থানীয় কয়েকজন মহিলা বলেন, আগে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ নিতে পারতাম। এখন সেটাও পারি না। বিভিন্ন সমস্যায় আমাদের বিনা চিকিৎসায় ভুগতে হচ্ছে। বিশেষ করে গর্ভবতীদের ডেলিভারির পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এ ছাড়া প্রসবকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছের আলী মোড়ল কালবেলাকে বলেন, এ জনপদের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। জেলা শহরে গিয়ে ভালো চিকিৎসা করাতে পারে না তারা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও অনেক দূরে অবস্থিত। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হিমসিম খায়। ফলে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে জনবল নিয়োগ দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এ জনপদের মানুষ চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বিশেষ করে শিশু ও নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
কয়রা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন কালবেলাকে বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে প্রতি মাসে দুই দিন চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বাগালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের এফডব্লিউভি পারুল বেগমকে মাসে দুই দিন সেখানে যুক্ত করা হয়েছে ।
তিনি আরও বলেন, জনবলের অভাবে সেখানে চিকিৎসাসেবায় সাময়িক ব্যাহত হচ্ছে। দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের এফডব্লিউভি পদে যিনি ছিলেন তিনি গত জুন মাসে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। শূন্যপদের বিপরীতে জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই জনবলের সংকট সমস্যার সমাধান হবে।
মন্তব্য করুন