১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ গঠিত হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ছিল না সাংগঠনিক কোনো কার্যালয়। যত্রতত্রভাবে পরিচালিত হতো আওয়ামী লীগের দাপ্তরিক কার্যক্রম। বিভিন্ন সময় দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের বাড়িতে বসে সম্পাদন করা হতো দলীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে রাঙ্গুনিয়ায় দলীয় কার্যালয় স্থাপনের দাবি থাকলেও কেউই উদ্যোগ নেয়নি। তবে অবশেষে সেই উদ্যোগ নিলেন রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
তার হাত ধরে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগের স্থায়ী কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালেই শেষ হয় প্রথম তলার কাজ এবং ২০১৯ সালে এসে ষষ্ঠতলা পর্যন্ত কার্যালয় স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়। সে বছর থেকেই নিজস্ব ভবনে শুরু হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এমনকি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে নিজস্ব এ কার্যালয় থেকেই। এভাবে প্রতিষ্ঠার ৭২তম বছরে নান্দনিক ভবন পেল রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। ভবনটি নির্মাণে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের ইছাখালী এলাকায় কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন প্রায় দশ শতক জমির ওপর নির্মিত হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের দৃষ্টিনন্দন কার্যালয়। নতুন ভবনে চলছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। মূল গেট পেরুতেই সুপ্রশস্থ প্রাঙ্গণ। এরপরেই ছয়তলা নান্দনিক ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের এ ভবনের সামনের অংশের বামপাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ডানপাশে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।
বঙ্গবন্ধুর ছবির উপরের অংশে লেখা রয়েছে, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’। অপরদিকে শেখ হাসিনার ছবির নিচেই রয়েছে দলীয় প্রতীক নৌকা এবং উপরে দুই লাইনে লেখা রয়েছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা, চট্টগ্রাম’।
এ ছাড়া সামনের অংশটিকে নান্দনিক ডিজাইনে নানা কারুকাজে সাজানো হয়েছে। ভবনটির প্রথম থেকে প্রতিটি তলার আয়তন ৩ হাজার ২০০ বর্গফুট। সিঁড়ির পাশাপাশি ভবনটিতে বর্তমানে একটি লিফট স্থাপনের কার্যক্রম চলছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভবনটির নিচতলায় রয়েছে একসঙ্গে প্রায় চারশত নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করার জন্য বিশাল হলরুম। সঙ্গে রয়েছে নামাজের স্থান, আধুনিক শৌচাগার এবং একটি অফিস কক্ষ। একই আয়তনের ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ব্যাংক, বীমা কিংবা অন্যান্য অফিসের ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা হয়েছে।
চতুর্থ তলায় রাখা হয়েছে রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের জন্য কক্ষ। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদকের জন্যও রয়েছে আলাদা আলাদা কক্ষ।
অন্যদিকে রাঙ্গুনিয়া থেকে প্রতিনিধিত্বকারী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের জন্যেও পৃথক একটি কক্ষ চতুর্থ তলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ফ্লোরেও নামাজের জন্য স্থান, নেতাকর্মীদের জন্য অপেক্ষমাণ কক্ষও রাখা হয়েছে।
পঞ্চম তলায় আওয়ামী লীগের প্রত্যেক অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের জন্য আলাদা আলাদা অফিস কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের জন্যও আলাদা একটি কক্ষ দেওয়া হয়েছে এ ফ্লোরে।
ষষ্ঠতলাতেও বিভিন্ন কক্ষ করা হয়েছে। তবে এ ফ্লোরটি কী কাজে ব্যবহার করা হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
নতুন এ ভবনের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের অভাবে আমরা অনেক ভোগান্তিতে ছিলাম। দলীয় কর্মসূচি পালনে বিভিন্ন হলরুম ভাড়া করে, সাংগঠনিক কার্যক্রম করতে স্থায়ী কোনো ঠিকানা ছিল না। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হাত ধরে দীর্ঘদিনের সেই কষ্ট দূর হয়েছে। আমরা আমাদের নিজস্ব কার্যালয়ে বসে এখন সাংগঠনিক সব কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারছি।’
উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. শাহজাহান সিকদার বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই এ ভবনের নির্মাণকাজ চলাকালে প্রতিটি কার্যক্রম ওনি নিজেই মনিটরিং করেছেন। ওনার নির্দেশনার ফলেই উপজেলা আওয়ামী লীগের দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। যেখানে এখন পর্যন্ত খরচ প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা হয়েছে। ভবন হওয়ায় দলের যাবতীয় কার্যক্রম নিজস্ব ভবন থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। এতে দলীয় নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বাসিত এবং তথ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।’
চট্টগ্রাম উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতিস্বজন কুমার তালুকদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাঙ্গুনিয়ার মাঠে-ঘাটে আওয়ামী রাজনীতি করতে গিয়ে আমাদের সভা-সেমিনার বিভিন্ন হলরুম ভাড়া করে কিংবা দাপ্তরিক কাজকর্ম একেকসময় একেকজন সিনিয়র নেতার বাড়িতে, অনেক সময় চায়ের দোকানে বসে করতে হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি ভবন হবে এটি আমাদের প্রতিটি নেতাকর্মীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়নে কেউই উদ্যোগ নেয়নি। অবশেষে আমাদের শ্রেষ্ঠ ভূমিপুত্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক তারকা ড. হাছান মাহমুদের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয় স্থাপনের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলো। একটি স্থায়ী ঠিকানা পেল উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ দলের প্রতিটি সংগঠন সাংগঠনিকভাবেও গতিশীল হয়েছে। রাঙ্গুনিয়ার আওয়ামী রাজনীতিতে তথ্যমন্ত্রীর এ উদ্যোগ, অবদান কখনো ভোলার মতো নয়।’
মন্তব্য করুন