প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম। এসময় পর্যটকে ভরপুর থাকে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। ব্যবসায়ীরাও থাকেন উৎফুল্ল। কিন্তু এবারের মৌসুম শুরু হতে না হতেই বিএনপির ডাকা টানা হরতাল অবরোধ কর্মসূচি পর্যটন বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার। এতে ভরা মৌসুমে প্রতিদিন পর্যটন খাতের সব অনুষজ্ঞ মিলে কমপক্ষে গড়ে ১০-১৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। যদিও এরই মধ্যে পর্যটনের অন্ধকার যাত্রায় আলো হয়ে আসে কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানীর রেলপথ যোগাযোগ।
১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজারের পথে রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় প্রতিদিনই কয়েকশ পর্যটক আসা-যাওয়ায় রয়েছে। যদিও প্রায় ৫০০ আবাসিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সংখ্যা অতি নগণ্য। তবে বিজয় দিবস ও সপ্তাহিক ছুটিতে কক্সবাজারে ভিড় করেছে পর্যটক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সপ্তাহিক ছুটি এবং বিজয় দিবস উপলক্ষে গেল ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত হোটেল-মোটেলের শতভাগ রুম বুকিং হয়েছে। তবে রোববার থেকে এটি কমে শতকরা ৫০ ভাগের নিচে নেমে আসবে। তবে সপ্তাহিক ছুটিকে পূঁজি করে ব্যবসায়ীক ক্ষত কিছুটা পোষানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ বলেন, এবারে পর্যটনের ভরা মৌসুমে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটনশূন্য যাচ্ছে কক্সবাজার। তবে কিছুটা আশা জাগিয়েছে বিজয় দিবস। ১৪-১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল ও কটেজের শতভাগ কক্ষ বুকিং ছিল।
তবে, কক্সবাজার আসার পর যাত্রীবাহী টমটম চালকদের হাতে হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা। যদিও পর্যটকদের নিরাপত্তায় সচেষ্ট রয়েছেন বলে দাবি ট্যুরিস্ট পুলিশের।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনি পয়েন্ট, সুগন্ধ পয়েন্ট এবং কলাতলী পয়েন্টে পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়। কেউ কেউ সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউ বিচ বাইকে, কেউ জেট স্কিতে চড়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকে সমুদ্রের নীল জলরাশিতে পা ভিজিয়ে নিচ্ছেন। তবে পর্যটকের পাশাপাশি দর্শণার্থীদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসা পর্যটক আনিসুল ইসলাম বলেন, সুযোগ পেলেই কক্সবাজার বেড়াতে আসি। কিন্তু কক্সবাজারের কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ে না। বরং বালিয়াড়ি দখল করতে দেখি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, বন্ধুরা মিলে সাগরের নীল জলরাশি দেখে মনটা জুড়িয়ে গেছে। কিন্তু কক্সবাজার আসার পর থেকে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। সবচেয়ে বাজে লেগেছে ভিক্ষুক আর ভাসমান হকারের কারণে।
ময়মনসিংহ থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা আজিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে কক্সবাজার এসেছি ভয়ে ভয়ে। এখানে এসে পরিবেশটা ভালোই লেগেছে। কয়েকদিন কক্সবাজার থাকার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু দুইদিন পর কক্সবাজার ঘুরে বেড়ানোর আর কোনো জায়গা নেই। তাই হতাশা নিয়ে ফিরে যাবো। শিশু পার্ক, রাত্রীকালীন বিনোদন, সিনেপ্লেক্স স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ভরা মৌসুমেও পর্যটক শুণ্যতার কারণে ব্যবসা না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে অনেক রেস্তোরাঁ। হোটেল থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে অনেক শ্রমিক।
হোটেল সি-প্রিন্সেস এর সিনিয়র ম্যানেজার মাজেদুল বশর চৌধুরী সুজন বলেন, বিজয় দিবসের আগে এবং পরের দিন হোটেলে শতভাগ বুকিং ছিল। কিন্তু রোববার থেকে আবারো কমতে শুরু করবে পর্যটক।
হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিচ হলিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফিজুর রহমান লাভলু বলেন, চলতি সপ্তাহে ব্যবসাটা ভালোই ছিল। কিন্তু আবারও বুকিং কমে আসছে।
এদিকে পর্যটকরা যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। হয়রানির অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সি সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের অনেকে সৈকতে গোসল করতে নামে। ভাটার সময় গোসলে নিষেধ করা হলেও তা আমলে নিচ্ছে না।
মন্তব্য করুন