পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পৌরসভার সড়ক সংস্কারকাজে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সরেজমিন অনুসন্ধানেও এর সত্যতা মেলে। অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করায় সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি পৌর সদরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়, যাতে বরাদ্দ রয়েছে ১৫ লাখ ১২ হাজার ৯৯৭ টাকা। রাস্তাটির কাজ পায় ঠাকুরগাঁওয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই ট্রেডার্স। তবে কাজটি তারা দেবীগঞ্জের ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন দেলুর কাছে বিক্রি করেছে।
প্রাক্কলন অনুযায়ী রাস্তার দৈর্ঘ্য ধরা আছে ৪৬১ মিটার এবং প্রস্থ ধরা আছে ৩ দশমিক ৭ মিটার। সরেজমিন অনুসন্ধানে পুরো রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
সোমবার (৫ জুন) ওই এলাকায় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে স্থানীয়রা রাস্তার প্রস্থ মাপতে গিয়ে দেখেন, জায়গাভেদে প্রস্থ রয়েছে ৩ মিটার থেকে ৩.০৫ মিটার। প্রাক্কলন অনুসরণ না করে রাস্তার প্রস্থ ২ ফিটের বেশি কমিয়ে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে রাস্তার এক-তৃতীয়াংশ জায়গা এজিং করে খোয়া ফেলা হয়েছে।
এদিকে প্রাক্কলন অনুযায়ী ৩ ইঞ্চি পরিমাপের খোয়া ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি পরিমাপের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। খোয়ার মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এলাকাবাসী। এই সময় বেশ কিছু খোয়া হাতের চাপে ভেঙে দেখান স্থানীয়রা। অথচ প্রাক্কলন অনুযায়ী রাস্তায় পিকেট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এজিংয়ে ১ নাম্বার ইট ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও সেখানেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রাস্তার ব্লাকটপ সরিয়ে সেগুলো পুনরায় ব্যবহারের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ২ ফিটের বেশি রাস্তার প্রস্থ কমিয়ে রাস্তাটি সংকীর্ণ করা হচ্ছে। এতে পোস্ট অফিস থেকে হাসপাতালে যাওয়ার জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি ভবিষ্যতে বিপদ সংকুল হয়ে উঠবে। রাস্তাটি দিয়ে একটি ট্রাক্টর কিংবা মাইক্রো গেলে বিপরীত দিক থেকে অন্য কোনো যানবাহন ক্রসিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে না। এতে এই রাস্তায় যাতায়াতকারী রোগী ও সাধারণ মানুষকে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে রাস্তার কাজের অনিয়মের ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ।’
একই এলাকার আনিছুর রহমান বলেন, ‘রাস্তার প্রস্থ যে আগের থেকে অনেকটা কমে গেছে, আমরা প্রথমেই বুঝতে পেরেছি। তবে এখন মেপে তার সত্যতা মিলল।’
এদিকে পৌরসভার বিভিন্ন কাজে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। পৌর মেয়রের কাছে বলে পরিচিত দেলোয়ার হোসেন দেলু যেসব কাজ করছেন, তাতে বরাবরই অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দীক অতীতেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে কোনো রকম পদক্ষেপ নেননি।
এ বিষয়ে সাব-ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, ‘আমরা যেটুকু কাজ করব, ঠিক ততটুকু বিল পাব। তবে অভিযোগ যেহেতু এসেছে আমরা পুনরায় প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করব। ব্ল্যাকটপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্ল্যাকটপ গিলে খেয়েছি। এ ব্যাপারে আপনাকে কেন বলতে যাব বলে তিনি ফোন কেটে দেন।’
এর কিছুক্ষণ পরে তার ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে ফোন দেন সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের ভাই আশরাফুল আলম এমু। আশরাফুল আলম এমু বলেন, ‘আমরা প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করছি। আপনার কোনো অভিযোগ থাকলে পৌর ইঞ্জিনিয়ারকে বলবেন। ভবিষ্যতে আমাদের কাজে কখনোই ফোন করবেন না।’
এর কিছুক্ষণ পরে তিনি উপজেলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকানে ১৫/২০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিসহ এসে দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও অনিয়মের ঘটনায় তথ্য সংগ্রহকারী নাজমুস সাকিব মুনকে বলেন, ‘তোকে থাপড়ানো দরকার। তোর পা ধরে আছড়াব। আমি যদি আগের মতো থাকতাম, তাহলে আগে পিটাতাম তারপর কথা বলতাম। আমার হাতে অনেক টোকাই ছেলেপেলে আছে। কিছু টাকা দিলে বাজারে ওরা তোর কলার ধরবে। আমার রাজনীতি আলাদা আবুর (মেয়র) রাজনীতি আলাদা।’ এভাবে অকথ্য ভাষায় হুমকি দেন তিনি। পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সাখাওয়াদ আলী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। আগামীকাল প্রাক্কলন অনুযায়ী পুনরায় রাস্তার কাজ করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দীকের মুঠোফোনে কল দিলে ফোন রিসিভ করেননি তিনি।
মন্তব্য করুন