মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে শীতের অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ, ঝাঁক বেঁধে ওড়ে বেড়ানো ও বিলের পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি- এ যেন অন্যরকম সৌন্দর্যে সেজেছে। এ সব দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন অসংখ্য পর্যটক। তবে বিলের সৌন্দর্য্য রক্ষায় বাইক্কা বিল প্রকল্প চালু, বিল খনন করাসহ বিলের আয়তন বৃদ্ধি দাবি উঠেছে। পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণে চরম অবহেলার পাশাপাশি মাছের জন্য বিখ্যাত বাইক্কা বিলে অবৈধ ভাবে পাখি শিখারীদের দৌরাত্বা বন্ধ না হওয়ায় বাইক্কা বিল সৌন্দয যেমন হারাচ্ছে তেমনি সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
চায়ের স্বর্গরাজ্য মৌলভীবাজারের হাইল হাওরের পূর্ব দিকের প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের একটি জলাভূমি। পূর্বপাশেই রয়েছে প্রায় ২৫০একর আয়তনের জলাভূমি নিয়ে অপরূপ সৌন্দর্যের এই বাইক্কা বিলে প্রায় ১৭৫ প্রজাতির পাখির আগমন ঘটে। বিলের মূল আকর্ষণ পরিযায়ী আর স্থানীয় পাখি হলেও হাওরে মাছের রাজ্যও রয়েছে। বাইক্কা বিল ঋতুভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। বিলের বুনো বাসিন্দা,পাখিদের গতিবিধি আর বিলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সেখানে তৈরি হয়েছে একটি সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
বিলের দাপুটে পাখিরা হলো, শঙ্খচিল, ভুবনচিল, পালাসীকুড়া, সরালি, মরচেরং, ভূতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস আর ল্যঞ্জা হাঁস। এ ছাড়া পানকৌড়ি, রাঙ্গাবক, কানিবক, গোবক, ধলাবক, ধুপনিবক পালাসীকুড়া ঈসল, দলপিপি, নেউপিপি, পান মুরগি, বেগুনি কালেম, কালোমাথা কাস্তেচরা, গেওয়ালা বাটান, মেটে মাথা চিটি, কালাপঙ্খ ঠেঙ্গী, ধলা বালিহাঁস, পাতিসরালী, রাজসরালী, মরচেরং, ভূতিহাঁস, গিরিয়াহাঁস, ল্যাঙ্গা হাঁস, গুটি ঈগলসহ নাম না জানা হাজারো পাখিদের বাইক্কা বিলের আতিথিয়তা গ্রহণ করতে এখানে আগমন ঘটে।
২০০৩ সালে চাপড়া, মাগুড়া ও যাদুরিয়া বিলের নামে বাইক্কাবিল স্থায়ী মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। অভয়াশ্রমটির জীববৈচিত্র্য ফিরে পাওয়া ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শুরু থেকে সরকার বড়গাংগিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে। ধীরে ধীরে বিলটি মাছের পাশাপাশি পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে ওঠে। অতিথি পাখি আর দেশীয় নানা জাতের পাখির নিরাপদ আবাসস্থল। সারা বছরজুড়ে পাখি ও মাছের মিলন মেলা থাকলেও শীতকালে তা পায় ভিন্ন আমেজ।
বাইক্কাবিলে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় পাখি আসলেও প্রতিদিন বিল তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। বিশেষ করে বাইক্কবিলে নিরাপত্তায় লোকবল সংকট। এক সময় টিকেট চালু থাকলেও এখন সেটি নেই। ফলে যে যার মতো করে বিলে আসা যাওয়া করছে। এতে করে অবৈধ ভাবে অতিথি পাখি ও মাছ শিকার বেড়ে গেছে। পিকনিকের নামে যারা আসছেন তারাও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা খাবার প্যাকেট ফেলছেন। এত কমে সৌন্দয নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। পাখি ও মাছের খাদ্য ভাণ্ডারখ্যাত বাইক্কাবিলে সরকারি বৃগৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পৃষ্টপোষকতা করা প্রয়োজন। মাছের জন্য অভয়াশ্রম পাখির জন্য নয়। কারন মাছের জন্য বরাদ্দের টাকায় পাখিদের নিরাপক্তা দিয়ে আসছি আমরা। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি পর্যটকসহ সবার সচেতনতার প্রয়োজন।
বাইক্কা বিলের ঘুরতে আসা পর্যটক আশিক উদ্দিন বলেন, বাইক্কা বিলে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি দেখে আমি মুগ্ধ। বিলের ধারের সবুজ বাগান প্রকৃতি আনন্দ দেয়। কিছুটা বড় আকারের কয়েকটি পাখির দেখা পেলাম।
বাইক্কা বিলের ঘুরতে আসা পর্যটক সুমি আক্তার বলেন, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ানো ও বিলের পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি দৃশ্য নজর কেরেছে। বাইক্কা ঘুরে মনোরন দৃশ্য দেখে তারা মধ্যে প্রশান্তি ফিরে পেয়েছেন। পাখি দেখতে পর্যটকদের জন্য এখানে তৈরি করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। গত বছর যে পরিমাণ পাখি ছিল, এ বছর পাখি কম মিলেছে।
শ্রীমঙ্গল বাইক্কা বিল বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন (আরএমও), সভাপতি পিয়ার আলী বলেন লোকবল সংকটাপন্ন সত্বেও চেষ্টা করে যাচ্ছেন পাখি ও পরিবেশ রক্ষার। তিনি আরও বলেন, পর্যটকরা শীত মৌসুমে বেশি আগমনে পুলিশ ও উপজেলা এবং স্থানীয়ভাবে সকলের সহযোগিতায় চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিলেট ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাইক্কা বিলের বন্ধ হওয়া প্রকল্প চালু, বিলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করাসহ পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারলে পর্যটন ক্ষেত্রে বাইক্কা বিল থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
মন্তব্য করুন