নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরষদের চেয়ারম্যানসহ ৭ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকা-১৯ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহকারী জজ জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত পৃথকভাবে এ সকল নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
যেসব প্রার্থী কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমিন চৌধুরী সুমি, পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. পারভেজ দেওয়ান। এ ছাড়া অন্যান্যরা হলেন- রকি, মো. সাইদ ও টিপু।
গত বুধবার রাতে সাভারের থানা স্ট্যান্ড এলাকার ঘটনার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুর রহমানকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, গত বুধবার রাতে এনামুর রহমানের উপস্থিতিতে তার কর্মী ও সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার একটি অনলাইন প্রত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এটি আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ৬(ক) ও ৭(২) বিধির লঙ্ঘন।
গত বৃহস্পতিবারের ঘটনার কথা উল্লেখ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে দেওয়া নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিন্দুরিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থানের উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে টাকা হস্তান্তর করেন। কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে কারও নির্বাচনী এলাকার যে কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো প্রকার চাঁদা বা অনুদান দিলে তা জাতীয় সংসদ আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ৩ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। অনুদান দেওয়ার ছবি ও সংবাদ অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে । উক্ত আসনের ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিমের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে পেয়েছেন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
অন্যদের মধ্যে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমিন চৌধুরী সুমিকেও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তার নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, নৌকার প্রচারে অংশ নিতে গিয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী নুরন্নাহার আক্তার আলোকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছেন ইয়াসমিন চৌধুরি সুমি। এমন অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ গত বুধবার একটি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এমন ঘটনা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ৬ (ক) ও ১১ (৭) বিধির লঙ্ঘন।
পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. পারভেজ দেওয়ানকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচারে পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিন্দুরিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থানের উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের তহবিল থেকে টাকা হস্তান্তর করেছেন। এটি আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ৩ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। উক্ত আসনের ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিমের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে পেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
নির্বাচনে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানোর কথা উল্লেখ করে রকিকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, রকিসহ অন্য ব্যক্তিরা ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার তৌহিদ জং ওরফে মুরাদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার করা আব্দুল হালিমকে হুমকি দেন ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। গত সোমবার রাতে রকিসহ অন্যান্যরা সাভার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাতলাপুরের হালিম মার্কেটে আব্দুল হালিমের নিজস্ব কার্যালয়ে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। বিশ্বজিৎ কর্মকার নামে নিরাপত্তারক্ষী হামলাকারীদের বাধা দিলে নিরাপত্তারক্ষীকে নির্বাচনী প্রচার না করার জন্য হুমকি দেন।
এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে পেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এমন ঘটনা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১১ (গ) বিধির লঙ্ঘন। একই অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে মো. সাইদকে।
টিপুর কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, টিপুসহ অন্যান্য ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং ওরফে মুরাদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে জড়িত আবু সাইদকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন।
গত সোমবার রাত ৩টায় তারা ভাগলপুর সিরামিক্স বাজারের দক্ষিণ পাশে আবু সাইদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে তার স্থাপন করা মুরাদ জংয়ের অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করে। পরে ওই কার্যালয়ের পাশে আবু সাঈদের বাড়িতে হামলা করে। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে পেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১১ (গ) বিধির লঙ্ঘন।
এ ছাড়া নোটিশে বিধিমালা লঙ্ঘনের কারণে কেন নির্বাচন কমিশনে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে না এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে না সে বিষয়ে আগামী ২৬ ডিসেম্বর রকি, মো. সাইদ ও টিপুকে এবং পরদিন এনামুর রহমান, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ইয়াসমিন চৌধুরী সুমি ও পারভেজ দেওয়ানকে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহকারী জজ জাকির হোসেনের কার্যালয়ে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি ২ জন প্রার্থীসহ ৭ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন