দেবিদ্বার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৩, ০৩:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

২৫ বছর পর কারামুক্ত ফাঁসির আসামি রাখাল চন্দ্র

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার। ছবি : কালবেলা
বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার। ছবি : কালবেলা

২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল। ফাঁসির সেলে অপেক্ষা। কয়েক ঘণ্টা পরই কার্যকর হবে মৃত্যুদণ্ড। ইতোমধ্যে গোসল সেরে শুকনো খাবারও খেয়েছেন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার। ‍যিনি ১৯৯৯ সালের একটি ষড়যন্ত্রমূলক খুনের মিথ্যা মামলায় দণ্ডিত। এদিকে ফাঁসির যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কুমিল্লা কারা কর্তৃপক্ষ।

ফাঁসি কার্যকরে আর মাত্র দেড় ঘণ্টা বাকি। রাখাল চন্দ্রও হয়তো নিশ্চিত ছিলেন এই দিনক্ষণেই হয়তো তাঁর নিতে হবে চির বিদায়। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৯টা বেজে ৩০ মিনিট। এরই মধ্যে ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফের ওয়্যারলেস বার্তা এল কারা কর্তৃপক্ষের কাছে।

ফাসি হলো না রাখাল চন্দ্রের। ওই বছরের ৬ এপ্রিল বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ‘মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি কাল’ এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে ফাঁসি কার্যকরের মাত্র দেড় ঘণ্টা আগে রাত সাড়ে ৯টায় সেনাপ্রধানের সুপারিশে রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখালের মৃত্যুদণ্ডাদেশ মওকুফ করেন। আর যার নেপথ্যে ছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবিরসহ এই সংগঠনের অন্য সদস্যরা।

সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় রাখাল চন্দ্রকে। ২৫ বছর ৭ মাস ২৬ দিন রেয়াতসহ রাখাল নাহার মুক্তির সুপারিশ করা হয় ২০১৫ সালে। তবে তখন তিনি মুক্তি পাননি। অবশেষে অবশেষে দীর্ঘ কারাভোগ থেকে মুক্তি মিলেছে কুমিল্লার দেবিদ্বারের বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার।

রোববার (২ জুলাই) দুপুরে কুমিল্লা কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি। তার মুক্তির খবরে পুরো গ্রামে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।

তবে এখন রাখাল চন্দ্রের সুস্থতার জন্য, বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে চলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। মৃত অক্ষয় চন্দ্র নাহার ছেলে বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে।

জানা যায়, ফাঁসির সাজা মওকুফ করার পর রাখাল চন্দ্রের ৩০ বছরের সাজা হয়। তবে তিনি সাজা ভোগ করেছেন ২৪ বছর ৭ মাস। কারাগারে ভালো ব্যবহারের কারণে ৪ বছর ৭ মাসের সাজা মওকুফ করে কারা কর্তৃপক্ষ।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে জমি জমা নিয়ে পূর্বশত্রুতার জেরে জেঠাতো বোনের জামাই দীনেশ চন্দ্র দত্তকে হত্যার অভিযোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহা ও তার ভাই নেপাল চন্দ্র নাহার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করে দীনেশ চন্দ্রের পরিবার। মামলার পর রাখাল চন্দ্রকে আটক করা হলেও কয়েক বছর পলাতক থাকার পর নেপাল চন্দ্র নাহার মৃত্যু হয়। ওই মামলায় ২০০৩ সালের ২০ জানুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র নাহার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। পরে ওই মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করার জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কাছে দাবি জানান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির, সাবেক সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা। এরপর ২০০৮ সালের ৩০ জুন তার মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে যাবজ্জীবন সাজা দেন রাষ্ট্রপতি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেবিন ক্রুদের আসল কাজ কী

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের বড় সুখবর দিল সরকার

জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে এবার আইপিএলে কাজ করা অ্যানালিস্ট

আমরা লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে : নেতানিয়াহু

৩ প্যাকেট কাঁচা নুডলস খেয়ে ১৩ বছরের কিশোরের করুণ পরিণতি

তিস্তার বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন ভাসছে অনিশ্চয়তার অথৈ জলে

ব্যাংকিং টিপস / ব্যাংকের সুদের হার ও চার্জ সম্পর্কে সচেতন থাকুন

শতভাগ লুটপাটমুক্ত দল জামায়াতে ইসলামী : ড. মোবারক

মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে এসে মারা গেলেন ছেলেও

১০

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

১১

সিঙ্গারে চাকরির সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

১২

মেসিহীন মায়ামিকে বাঁচাল রদ্রিগেজের দুর্দান্ত গোল

১৩

গাজায় যেভাবে দুর্ভিক্ষ নেমে এলো

১৪

লেভান্তের মাঠে বার্সার রোমাঞ্চকর জয়

১৫

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

১৬

আকিজ গ্রুপে চাকরি, বেতন ছাড়াও থাকবে নানা সুবিধা 

১৭

বাগেরহাটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

১৮

যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করছে ভারত

১৯

২৪ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২০
X